শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যেই হঠাৎ স্কুল ড্রেস বিক্রি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তাদের তথ্য মতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে সাদা শার্ট।
বছরের প্রথম দিকে সাদা শার্ট বিক্রির হিড়িক থাকলেও বছরের মাঝামাঝি অবস্থানে এই বিক্রি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে খোদ বিক্রেতাদের কাছে।
বিক্রেতারা জানান, বছরের শেষ দিকে এই সময়ে শার্টের তেমন চাহিদা থাকে না। তার মধ্যে এখন যে হারে তা বিক্রি হচ্ছে, তা বছরের শুরুর দিকের চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নামে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর এগিয়ে আসে অন্যান্য স্কুল কলেজের ছাত্ররা।
আর শিক্ষার্থীদের টানা কর্মসূচির কারণে রাজধানীতে চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। পণ্য সরবরাহে ঘাটতির কারণে সবজি ও মাছের দামও বেড়ে গেছে।
এর মধ্যে আন্দোলনে ছাত্ররা ছাতাও বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্পৃক্ত হয়ে গেছে বলে তথ্য মিলেছে। শুক্রবার শাহবাগ এলাকায় গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষার সময় আমিনুল ইসলাম নাম উল্লেখ করে বাসদ নেতা পরিচয় দেয়া একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা করতে দেখা যায় একদল যুবককে। শুক্রবার বিভিন্ন অলি গলিতেও এই কাজ করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলছেন, যারা এই কাজ করছে, তারা ছাত্র কি না, সন্দেহ আছে। তাদের ব্যবহার নিয়েও সংশয় আছে। এর মধ্যেই স্কুলের পোশাক বিক্রির এই তথ্যটি সন্দেহকে আরও ঘনিভূত করেছে যে ছাত্রদেরকে কেউ ব্যবহার করতে চায় কি না।
রাজধানীতে স্কুল ড্রেস বা সাদা শার্ট পাওয়া যায় এমন কয়েকটি মার্কেটের মধ্যে অন্যতম নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেট, আল্লাহ করিম সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প’ ও পুরনো কাপড় বিক্রির মার্কেট গরীবুল্লাহ মার্কেট।
কত বিক্রি হয়েছে, জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের স্কুল ড্রেস বিক্রির সবচেয়ে বড় দোকানটির মালিক আনিসুর রহমান তার হিসেবের খাতা খোলেন। এসময় তিনি জানান, ‘বিষয়টা অবাক করার মত। এই টাইমে কখনো এত শার্ট বিক্রি হওয়ার কথা না। যা বিক্রি হয়েছে তার সব সাদা আর কালো স্কুল ড্রেসের শার্ট। বুধবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। আর কোন ছোট শার্ট না, সব বড়গুলা বিক্রি হইছে।’
এই বিক্রেতা বলেন জানান, ‘আমরা তো বাহিরে বের হই। গতকাল সদরঘাটের দিকে গিয়েছিলাম। ধানমন্ডিতে দেখলাম। আমার কাছে সত্যি বলতে এদের অনেককে ছাত্র মনে হয় নাই। ছাত্র আর কামলা আমরা চিনি। কার ভাষা ব্যবহার কেমন আমরা জানি।’
বুধবার একই মার্কেটের অপর এক বিক্রেতা রাসেল একই হারে শার্ট বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাদা বিক্রি করছি, বড় সাইজ নাই জন্য অনেক কাস্টমার ফেরতও দিছি। এত শার্ট তো আমরা রাখি না। কারণ এই টাইমে শার্টের এত চাহিদা থাকে না। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরির শার্ট কয়েকটা বিক্রি করছি।’
একই হারে সাদা শার্ট বিক্রি হয়েছে আল্লাহ করিম সুপার মার্কেটে। গতকাল ৬টি স্কুল শার্ট বিক্রি করছেন বিক্রেতা রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০ দিনেও ছয়টা শার্ট বিক্রি করতে পারি না। বাজার এত খারাপ। একদিনে ছয়টা বিক্রি করছি। এহন বিক্রি হইল ক্যান এটা জিগাইতে চলে আইছেন?’
গরীবুল্লাহ মার্কেটটে বাসা বাড়ি থেকে পুরনো কাপড় কিনে এনে ধুয়ে বিক্রি করা হয়। পাওয়া যায় স্কুল কলেজের লোগো সহ শার্ট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিক্রেতা বলেন, ‘সাদা শার্ট আর স্কুল ড্রেসের অনেক শার্ট কাল ও পরশু বিক্রি করছি। কয়েকটা শার্টে পিছনের দর্জিগো দিয়ে স্কুলের লোগো লাগাইয়া নিছে।’
‘কে ছাত্র, কে কি? তা তো আমরা জানি না। আমগো কাছে তো সব কাস্টমার। আর আমরাও তো কোনো বেয়াইনি জিনিস বেচি নাই।’
Leave a Reply