শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন
লালমোহন প্রতিনিধি॥ ভোলার লালমোহনে জোয়ার ভাটার পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ও তেলবিহীন অভিনব এক সেচযন্ত্রের উদ্ভাবন করেছেন অলিউল্যাহ নামে এক কৃষক। উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পেশকার হাওলা গ্রামের ওই কৃষক স্থানীয় একটি খালে সেচযন্ত্রটি বসিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পানি উত্তোলণ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে কৃষক অলিউল্যাহর এ অভিনব উদ্ভাবন স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। এটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
কৃষক অলিউল্যাহ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচে লোহার এঙ্গেল, প্লেন সিট ও প্লাস্টিক পাইপের সাহায্যে তৈরি করেছেন এ সেচযন্ত্রটি। যেখানে ৮টি পাখা লাগানো রয়েছে, যা পানির স্রোতের সাহায্যে অনবরত ঘোরে। প্রতিটি পাখার উপরে ইফপিবিসি ক্লাস ডি পাইপ লাগানো হয়েছে এবং ওইসব পাইপের ভেতরে কয়েল পাইপ লাগিয়ে তা একটি কন্টেইনারে সন্নেবেশিত করা হয়েছে। এতে করে জোয়ারের প্রভাবে যখন পাখাগুলো ঘুরতে থাকে, তখন ইফপিবিসি ক্লাস ডি পাইপগুলো পানিভর্তি হয়ে কয়েল পাইপের মাধ্যমে কন্টেইনারে যায়। আর কন্টেইনার থেকে আরেকটি পাইপের সাহায্যে জমিতে অনবরত পানি নির্গত হতে থাকে। যন্ত্রটিকে প্রাথমিক পর্যায়ে জোয়ারের স্রোতে নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে, তবে এটিকে আরো আধুনিকায়ন করা হলে জোয়ার-ভাটা উভয় সময়েই পানি উত্তোলন করা যাবে এবং কৃষকদের সেচকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেচযন্ত্রটি, এমনটা দাবি ওই কৃষক অলিউল্যাহর।
সেচযন্ত্রটি দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, বৈদ্যুতিক মোটর বা ইঞ্জিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতাম। তাতে ব্যাপক পরিমাণ খরচ লাগে, তবে এটা দেখে মনে হচ্ছে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তার এমন উদ্ভাবন সব কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ব করবে।
অভিনব এ সেচযন্ত্রের উদ্ভাবক অলিউল্যাহ বলেন, বিদ্যুৎ ও ইঞ্জিনের সাহায্যে সেচ ব্যবহার করে প্রতি ৮ শতাংশ জমি চাষাবাদে কৃষকদেরকে প্রায় সাড়ে ৬০০ টাকা খরচ গুনতে হয়। তবে স্রোতের সাহায্যে চলা এ সেচযন্ত্র ব্যবহারে ৮ শতাংশ জমিতে খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। এতে বিদ্যুৎ খরচ, তেল-মবিল খরচ, মেকানিক বা পরিচালনার জন্য কোনো লোকের খরচ বহন করা লাগবে না। তার দাবি, অভিনব এ সেচযন্ত্রটি পরিবেশ বান্ধব। এতে ইঞ্জিন বা বৈদ্যুতিক মোটরের মতো কোনও শব্দ নেই। খালে পানির স্রোত যত বাড়বে, এ সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানিও তত বেশি উত্তোলন হবে। জোয়ার ভাটা দু’সময়েই পানি উত্তোলন করা যাবে এ সেচযন্ত্রটি দিয়ে, পানি উত্তোলন করা সম্ভব হবে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা। তাই এ সেচযন্ত্রটি আরো আধুনিকায়ন করতে সরকারি বেসরকারি অনুদানের দাবি জানিয়েছেন কৃষক অলিউল্যাহ।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএফএম শাহাবুদ্দিন বলেন, অলিউল্যাহ নামে এক কৃষক পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে একটি সেচযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। সেচযন্ত্রটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর কার্যকারিতা ও সম্ভাবতা যাচাইয়ের জন্য জেলা উপ-পরিচালক ও কৃষি প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে। যাচাইয়ের পরে সেচযন্ত্রটি কার্যকর হলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেটাকে বাণিজ্যিকভাবে তৈরিতে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করা হবে।
Leave a Reply