সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেরিতে হলেও শেষ সময়ে ভোলায় শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলেছে। ইতোমধ্যে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। তবে করনোর কারণে মণ্ডপগুলোকে সীমিত পরিসরে অনারম্বরভাবে পূজা আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে করে কাজ ও সাজসজ্জা কম থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছে প্রতিমা তৈরির কারিগররা। এনকি করোনার কারণে ঘরে ঘরে নেই আগের মতো পূজার উৎসবের আমেজ।
সরোজমিনে ভোলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আর মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকি। এবার জেলায় ১০৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে গত বছরের মতো এবার ভোলার মণ্ডপগুলোতে নেই বড় বাজেটে উৎসবের প্রস্তুতি।
প্রতিবছর ২ মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরিসহ সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুভাবের কারণে এ বছর শেষ সময়ে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এতে করে অল্প সময়ে প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কারিগররা। তাছাড়াও মণ্ডপের সাজসজ্জা ও কাজ কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে তারা।
এছাড়া বিগত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমা তৈরিতে দ্বিগুণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানালেন ফরিদপুর রাজবাড়ির প্রতিমা তৈরির ভাস্কর খোকন পাল। তিনি জানান, গত বছর তিনি ভোলা জেলায় ১৩টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে দেরিতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করায় মাত্র ৭টি প্রতিমা তৈরি কাজ করছেন। এতে করে রাত-দিন পরিশ্রম করেও লাভের মুখ দেখছে না তারা।
অপরদিকে একই কথা জানালেন ওয়েষ্টার্ন পাড়া শতদল বিকাশ ক্লাব মাঠ দুর্গাপূজা মণ্ডপ কমিটির সদস্য রাজন সাহা ও লক্ষন বনিক। তারা বলেন, পূজা মণ্ডপের প্রস্তুতির কাজ দুই থেকে আড়াই মাস আগে শুরু হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার এবং কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নির্দেশনার কারণে এ বছর দেরিতে পূজা আয়োজনের কাজ শুরু হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিগত বছরগুলোর মতো আলোকসজ্জা এবং সাজসজ্জা না করার পাশাপাশি অনাড়ম্বরভাবে দূর্গা উৎসব উদযাপন করবেন তারা। এছাড়া পূজা মণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার কথা জানান তারা।
শুধু মণ্ডপগুলোতেই নয়, করোনার করাণে এবার ভোলায় সনাতন ধমার্বলম্বীদের বাড়ি বাড়িও নেই আগের মতো উৎসবের আয়োজন। ঘর থেকে শিশুদেরকে বাইরে বের হতে না দেয়ায় অনেকেরই নতুন পোষক কেনা হয়নি। সামাজিক দূরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার পূজার উৎসব পালন করবে বলে জানিয়েছে তারা।
ভোলা শহরের মিহির লাল সাহার বাড়ির গৃহবধূ সরস্বতী সাহা ও কাকলী সাহা জানান, প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজা এলে তারা ঘরে ঘরে নারিকেলের নাড়ু, সাজ, মোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করেন। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে ঘরে ঘরে সেই উৎসবের আমেজ নেই। তারা এ বছর পূজায় ফল-ফলাদি দিয়েই দুর্গা মায়ের বন্দনা করবেন বলে জানান। মা দুর্গা করোনা ভাইরাস থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্ত করলে আগামী বছর আবার উৎসবের আমেজে তারা দূর্গোৎসব পালন করবেন বলে জানান তারা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণয় কুমার সাহা জানান, এ বছর ভোলা জেলায় ১০৫টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলা ২৬টি, দৌলতখানে ৬টি, বোরহানউদ্দিনে ২০টি, তজুমুদ্দিনে ১৪টি, লালমোহনে ১৮টি, চরফ্যাশনে ১১টি ও মনপুরা উপজেলা ১০টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দূর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ২৬ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনাড়ম্বরভাবে এ বছর শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পূজা মণ্ডপগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম ও সীমিত পর্যায়ে আলোকসজ্জা, জনসমাগম সীমিত রাখা ও মাদকমুক্ত পরিবেশে পূজা উদযাপনের বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে জানান, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার উৎসব পালনে মণ্ডপগুলোতে সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যে অনুদান পাওয়ার কথা সেটা পেয়েছি। পাশাপাশি ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের পক্ষ থেকেও অনুদান পেয়েছি। নিয়মশৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, পূজার দিনগুলোতে শহর ও শহরতলীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। থাকছে র্যাবের বাড়তি টহল। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহযোগিতা দেবে আনসার-ভিডিপি। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লীবিদ্যুত সমিতি পূজার দিনগুলোতে নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
Leave a Reply