সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার পাথরঘাটায় নবজাতক হত্যা মামলায় বাবার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের গাফেলতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারকে অবজারভেশন দিয়েছে।বুধবার দুপুরে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা জজ মো.হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ছোট পাথরঘাটা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে ফিরোজ। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।মামলা সূত্রে জানা যায়,পাথরঘাটা উপজেলার ১৪ বছরের কিশোরী ওই ট্রাইব্যুনালে ২০০৫ সালের ৭ মে ফিরোজসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
ওই কিশোরী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। ফিরোজ তার প্রতিবেশী।২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ঘরে ঢুকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে ফিরোজ। এরপর ফিরোজ বাদীকে বিয়ে করবে এমন প্রতিশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত তাকে ধর্ষণ করে আসছে।একপর্যায়ে বাদীর গর্ভে সন্তান আসে।
বিষয়টি জানালে ফিরোজ কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।পরে বিষয়টি মোস্তফা, নাসির,আশ্রাফ আলী,ইসমাইল ও নুরুল ইসলামের কাছে জানায়।তারাও বাদীকে বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
বুধবার দুপুরে ওই নারী যুগান্তরকে বলেন, আমি এ ঘটনার পর এলাকার অনেকের কাছে বিচার চেয়ে পাইনি। আস্তে আস্তে আমার গর্ভের সন্তান বড় হতে থাকে। পরে ওই ফিরোজ ও তার সহযোগীরা তাকে গর্ভপাতের একটি ইনজেকশন করায়।
তিনি বলেন,আমি গুরুতর অসুস্থ হলে ২০০৫ সালের ১২ মার্চ তারা আমাকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আমার গর্ভপাত করায়।তখন আমার সন্তানের বয়স ৭ মাস। আমার একটি জীবন্ত পুত্রসন্তান জন্ম হয়।
তিনি বলেন, আমার সন্তানের কান্না আমি শুনতে পেয়েছি।ওইদিন রাত ১১টায় আমার সন্তানটি আমার কাছ থেকে নিয়ে সালাম খলিফা গলাটিপে হত্যা করে।মাসুদা আমার সন্তানটির পা চেপে ধরে। পরে ওই আসামিরা আমার সন্তানের লাশ গুম করে।
ওই নারী বলেন,পরের দিন আসামিরা একটি মাইক্রোবাসে আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তারা আমার ও আমার বাবার কাগজে স্বাক্ষর নেয়। যাতে আমরা মামলা করতে না পারি। কিছুদিন পর একটু সুস্থ হয়ে পাথরঘাটা থানায় মামলা করতে গেলে তারা মামলা নেয়নি। মামলাটি তদন্ত করে পাথরঘাটা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ২০০৫ সালের ১৫ আগস্ট একমাত্র ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বাকি ৮ জনকে অব্যাহতি দেয়।
আদালত রায় ঘোষণার সময় অবজারভেশনে বলেন,এ মামলায় ১৩ জন সাক্ষী দিয়েছে।সব সাক্ষী বাদীর ঘটনা সমর্থন করেছে।তার পরও তদন্তকারী কর্মকর্তা একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।আদালত মনে করেন,মামলা তদন্তে পুলিশর গাফেলতি রয়েছে।আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফেলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বলবেন।মামলার আসামি ফিরোজ বলেন,আমি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।
Leave a Reply