মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তারদের সুসংগঠিত টিম ওয়ার্কের কারণে একের পর এক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন করোনা রোগী। করোনা শুরুর পরপরই আক্রান্তের তীব্রতা বাড়লেও আন্তরিকতা ও দক্ষতার সমন্বয়ে রোগীদের সুস্থ করায় সফলতা এসেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সময় বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা, সেখানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে একের পর এক কী করে রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন?
সুসংগঠিত ‘টিমওয়ার্ক’ একবাক্যে বলছিলেন ডা. এম কে আজাদ। তিনিই করোনা রোগীদের দেখভালের দায়িত্বে একমাত্র প্রশিক্ষিত চিকিৎসক।
কিন্ত জেলা জুড়ে যখন রোগীর সংখ্যা ৩০, তখন কী করে সামলাচ্ছেন? বললেন, ‘আমাদের তরুণ কয়েকজন চিকিৎসকের মনোবল, সহযোগীতা ও আন্তরিকতার পাশাপাশি সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। স্বজনদের ভুলে আমরা এই রোগীদেরই আপাতত আপন করে নিয়েছি।
ডা. আজাদ মনে করেন চিকিৎসক স্বল্পতা, সরঞ্জামাদির অভাব বা অবকাঠামোগত নানা জটিলতা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও দলগত আন্তরিক প্রচেষ্টায় করোনা রোগীদের সুস্থ করায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে।
কী করে এল সাফল্য: করোনা মহামারিতে হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার নিয়ে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে টানা দিন রাত অক্লান্ত সেবা দিয়ে সুস্থ করছেন করোনা রোগীদের। প্রতিটি গ্রুপে ২ জন মেডিক্যাল অফিসার ও একজন কনসালটেন্ট রয়েছেন। এছাড়া একজন করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ চিকিৎসক রয়েছেন মনিটরিং এর জন্য এবং ৯ জন নার্স দশ দিন টানা ডিউটি করছেন করোনা রোগীদের সেবায়।
জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১জনের ১০জনই সুস্থ হয়েছেন, হোম আইসোলেশনে থাকা আরো ১৭জনের অবস্থাও ভালো। জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন ও হোম আইসোলেশনের একজন, এই দু’জনও সুস্থ প্রায়।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) একদিনেই বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪ জন করোনা রোগী। এদের মধ্যে একজন ৭০ বছর বয়সী রোগীসহ ষাটোর্ধ্ব রোগী ছিলেন দুজন।
এর আগে গত এক সপ্তাহে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ষাটোর্ধ্ব একজনসহ আরো ৫ জন। সব মিলিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া ১১ জন করোনা রোগীর মধ্যে মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে ৯ জনই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিন-তিনবার ফলোআপ টেস্টে নেগেটিভ আসার পরেই তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে থাকা বাকি দুজন করোনা রোগীও সুস্থ হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
সবশেষ গতকাল বুধবার ছাড়পত্র পাওয়া ৭০ বছর বয়সী আ. খালেক সিকদার এখন পুরোপুরি সুস্থ।
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগের কথা হুইননা প্রথম তো ভয় পাইয়াই গেছিলাম। মনে করছিলাম আর বুঝি বাঁচন নাই। বরগুনা হাসপাতালের ডাক্তার আর নার্সরা আমারে অনেক সাহস দেছে। কইছে দেকবেন আমনের কিছুই অইবে না। আসলেই আমার কিছুই অয় নায়। ডাক্তাররা আমাদের জন্য দিনরাত সেবা দিছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্স শাহনাজ পারভিন, যিনি বাসায় ছোট ছোট বাচ্চাদের রেখে নিয়মিত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সুভাষ দত্ত। এ পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য, দেশের মানুষের সেবা করার জন্যই তো এই পেশায় এসেছি। এখনই তো সেই উত্তম সময়। তাই সবাই মিলে এখন কাজ করছি করোনা রোগীদের সেবায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ও তরুণ চিকিৎসক মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমরা এই মহামারিতে স্বল্প সংখ্যক ডাক্তাররা টিম ওয়ারি কাজ করছি। আমাদের উদ্দেশ্য করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা করে সুস্থ করা, এতে আমরা সফল হচ্ছি। সামনে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি তাদের সেবা দেয়ার জন্য।
এছাড়া স্যাম্পল কালেকশন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা যেমন- (করোনা বা করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তির দাফন জানাজার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. রেজোয়ান, ডা. সুব্রত দিন রাত ২৪ ঘন্টাই সার্ভিস দিচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকর্মীদের নিয়ে।
বরগুনা জেলা নাগরিক সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতার মধ্যেও এক ঝাক তরুণ চিকিৎসকরা যেভাবে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করছেন আমরা বরগুনাবাসী তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ চিকিৎসক এম কে আজাদ (এফসিপিএস) জানান, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এখন অবধি কোনো মৃত্যু নেই। জেলার দুটি উপজেলায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের কেউই বরগুনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা নেননি ।
Leave a Reply