সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের একটি কোর্সের পরীক্ষা না দেয়ার অভিযোগে ৭৬ শিক্ষার্থীকে মোট ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি কর্তৃপক্ষ লঘুপাপে গুরুদণ্ড দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি পরীক্ষা না দেয়া এক ধরণের অপরাধ।
সেই অপরাধে একাডেমিক কাউন্সিল তাদের শাস্তি দিয়েছে। এই অপরাধে শাস্তি না দিলে অপরাধ ঘটতেই থাকবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা এই জরিমানাকে অযৌক্তিক দবি করেন। সেই সঙ্গে অযৌক্তিক এই জরিমানাকে জুলুম মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গতবছরের ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সপ্তম সেমিস্টারের ফাইনাল গকঞ-৪১৪ কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগে ২২ অক্টোবর ওই বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন উর রশিদ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার দেখানো হয়। তীব্র জ¦র থাকায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ২৩ অক্টোবর রাত ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামুনুর রশিদ অসুস্থ থাকায় ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সপ্তম সেমিস্টারের ফাইনাল গকঞ-৪১৪ কোর্সের পরীক্ষায় বিভোগের কোন শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ওই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা নেয়ারও সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরে শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের ২৬ তম সভায় বিশেষ বিচেনায় মার্কেটিং বিভাগের ওই কোর্সে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে। বিভাগের ৭৬ জন শিক্ষার্থীকে মোট ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় পূর্বক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পরীক্ষার সময় অসুস্থ শিক্ষার্থী মামুন উর রশিদের সহপাঠী মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি (সিআর) শারমিন জানান, কোর্সের পরীক্ষা পেছানোর জন্য ফর্মালভাবে আগে থেকে চেয়ারম্যান ম্যামকে জানানো হয়নি। পরীক্ষার আগেরদিন রাতে মৌখিকভাবে ছাত্র উপদেষ্টা স্যারকে পরীক্ষা না দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। তিনি অবশ্য বলেছেন বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিষয়। এরপর আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে পরবর্তীতে লিখিতভাবে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার আবেদন করেছি।
শিক্ষার্থী মামুন উর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সহপাঠীরা পরীক্ষায় বসেনি। আমাদের দাবি পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনেছেন। কিন্তু প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। উপাচার্য মহোদয়ের কাছে আবেদন, আমার অসুস্থতার বিষয়টি মানবিক বিবেচনা নিয়ে আমাদের জরিমানা মওকুফ করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। সেই কারণে ওই বিভাগের কোন শিক্ষার্থীই পরীক্ষা দেয়নি। একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তার জন্য কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা না শুনে সব শিক্ষার্থীরা ওই পরীক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমি কার্যক্রমের পরিপন্থি। এক ধরণের অপরাধ। পরে ওই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে চাইলে একাডেমিক কাউন্সিল তাদের জরিমানা দেয়া সাপেক্ষে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তীতে বিশেষভাবে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম নেই। তারপরও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে জরিমানা সাপেক্ষে তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করে টাকার পরিমান বেশি তাহলে বিভাগের মাধ্যমে জানাতে পারে।
মার্কেটিং বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী বাহাউদ্দিন আবির সাংবাদিকদের বলেন, এই জরিমানা অযৌক্তিক এবং অনেকেরই সামর্থের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে এই জরিমানা করেছে। এই শাস্তি লঘু পাপে গুরু দন্ডের মতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা এক ধরণের চাঁদাবাজি।
এব্যাপারে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারমান নুসরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, এব্যাপারে এখন আর কথা বলে লাভ কি। এটা একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে টাকা জমা দিয়ে দিচ্ছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টাকা জমা দেয়া শেষ হবে। এর পর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময়সূচি দেয়া হবে। টাকার পরিমাণ কম বেশির বিয়টি জানতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টে এসে বিস্তারিত জানতে পরামর্শ দেন তিনি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ তাই গোটা ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে না এটা বড় ধরণের অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা সেই শাস্তি দেয়নি। এখন এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে হলে নতুন করে পরীক্ষার সব ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে অনেক টাকা খরচ হবে। সেই টাকা কে দেবে। পরীক্ষা নেয়ার খরচ হিসেবেই তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল। একাডেমিক কাউন্সিল আরো বেশি ধার্য করেছিল। আমি বরং কমিয়ে দিয়েছি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই টাকার পরিমাণ আরো বেশি। তবে শিক্ষার্থীরা যাতে এই ধরণের অপরাধ না করে সেজন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে।
মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান নুসরাত জাহান সাংবাদিকদের জানান, একজন শিক্ষার্থী জন্য সবাই পরীক্ষা বর্জন করা বেমানান। মামুন উর রশিদের জন্য সিক বেডেরে ব্যবস্থা করে পরীক্ষা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউ সেকথা শোনেনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভুল করে। পিতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য তাদের ক্ষমা করবেন এটাই আমরা আশা করি। তা ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থীরা পরাশুনা করছে তারা অনেকেই নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় তারা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। তা না হলে অনেক সন্তান উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতো না। তাদের শাস্তি দিতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’’
Leave a Reply