বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি সংবাদদাতা:ঝালকাঠিতে আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র বিপদজনক দাহ্য পদার্থ পেট্রোলিয়াম এলপি গ্যাসের গুদাম গড়ে উঠেছে।এক শ্রেণির ঘর মালিক অধিক ভাড়ার লোভে এলপি গ্যাস ডিলারদের কাছে গুদাম ভাড়া দিচ্ছেন। এমনিক অনেকে আবাসিক বাসা বাড়ির কিছু ইউনিট বা কক্ষ গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। এসব গুদামে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি না থাকায় আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়েই চলছে।পৌর শহরের বাণিজ্যক এলাকা আড়দ্দারপট্টি, কাপুড়িয়া, ডাক্তার পট্টি ও উপজেলা পরিষদের সামনে এলপি গ্যাসের এজেন্টরা গ্যাসের বিশাল গুদাম ভাড়া নিয়ে সিলিন্ডারের মজুত করছে। আবাসিক ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গুদামজাত করার বিষয়ে প্রশাসনের কোন অনুমতি থাকার বিষয়ে তাঁরা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
এদিকে শহরের মুদি দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের ঔষধের ফার্মেসি ও কাপড়ের দোকানেও বিক্রি করা হচ্ছে এই গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার। অনেক খুচরা পেট্রোল বিক্রেতাদের দোকানেও গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়। ফলে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনে দুর্ঘটনা। একটি গুদামে কি পরিমান দাহ্য পদার্থ রাখার নিয়ম আছে তাও জানা নেই এসব গুদাম মালিকদের। বিশেষ করে আগুনের ঝুঁকিত আছেই। পাশাপশি যত্রতত্র এসব সিলিন্ডার বিক্রির ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে জনসাধারণকে। ফায়ার লাইন্সেবিহীন অবাধে চলছে এই ব্যবসা।
বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে লাইসেন্স ব্যতীত কোন ক্ষেত্রে এলপিজি গ্যাস মজুদ করা যাবে না। একই বিধিতে ৭১ ধারায় বলা আছে আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট পরিমান অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর ২ বছর অনধিক ৫ বছরের জেল ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। অর্থ অনাদায়ী থাকলে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায় , ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে শুরু করে কলেজ মোড় পর্যন্তই খুচরা গ্যাসের দোকান আছে ১০/১২ টি। শহরের বাণিজ্যক এলাকা আড়দ্দারপট্টি, কাপুড়িয়া, ডাক্তার পট্টি ও উপজেলা পরিষদের সামনে এলপি গ্যাসের এজেন্টরা গ্যাসের বিশাল গুদাম ভাড়া নিয়ে সিলিন্ডারের মজুত করছে। প্রতিদিন সকালে ট্রাকে করে এ সকল গুদামে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার গুদামজাত করছে।
একাধিক গুদাম পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে, ট্রাক থেকে গ্যাস সিলিন্ডার শ্রমিকরা মাথায় নিয়ে গুদামে ফেলছে। যা বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোন সময়। প্রতিটি গুদামের আশেপাশে অসংখ্য বসতবাড়ি রয়েছে। ১০টির কম গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার দোকানে থাকলে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই এমন আইনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা। বিশেষ করে তারা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিক সিলিন্ডার রেখে অবৈধ ভাবে গ্যাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গুদামসহ এজেন্টদের বিক্রয়স্থলে নেই কোন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। যদিও এ যন্ত্র রাখা বধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে ডাক্তার পট্টি এলাকার বাসিন্দা মনোজ কুমার বলেন, এভাবে গ্যাস ব্যবসায়ীরা আবাসিক এলাকায় গুদাম ভাড়া নিয়ে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার মজুত করলে আমরা পরিবার নিয়ে অগ্নি ঝুঁকিতে থাকি। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
শহরের আড়ৎদারপট্টি হরিসভা মোড়ে এলাকায় মাসুম তালুকদার বলেন, এ ধরনের গ্যাসের গুদাম থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বাড়ির মালিকদেরও বেশী ভাড়ার লোভ সামলে আবাসিক এলাকায় বাসা বাড়িতে গুদাম ঘর ভাড়া দেয়া পরিহার করতে হবে।
এ বিষয়ে আড়ৎদার পট্টি এলাকার ব্যবসায়ী আলফু মিয়া বলেন, অনেক বিক্রেতা সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ কোথায় লেখা থাকে এবং মেয়াদের তারিখ থাকে কিনা তাও জানেনা।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির রোনলস সড়কের একজন বৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাতারাতি বিভিন্ন স্থানে যেভাবে গ্যাস বিক্রির দোকান হচ্ছে এর দায় ভার কে নেবে। এসব বেশির ভাগ গ্যাস বিক্রেতাদের কোন লাইসেন্স নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসে ২/৩টি অভিযান চালালে এগুলো রোধ করা সম্ভব। ঝালকাঠি শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব অবৈধ বিক্রেতাদের দোকানে নেই কোন আগুন নিভানোর যন্ত্রপাতি।
রানার গ্রুপের গ্যাস সিলিন্ডারের এজেন্ট বেঙ্গল ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি শহরের গুদামের খুবই সংকট। তাই সাময়িক সময়ের জন্য এ সব গুদামে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। তবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রসহ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে ঝালকাঠি শহর বরিশালের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে গ্যাস সিলিন্ডারের যত্রতত্র অবৈধ দোকান গড়ে উঠা, এসব দোকানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি না থাকা, গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডারের গুদাম সমূহে আগুন নিভানোর কোন যন্ত্রপাতি না রাখায় এ ঝুঁকি বেড়েই চলছে। বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তখন সচেতনতার সৃষ্টি হয়। যদিও আমরা গত মাসে এদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সতর্ক করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি মোবাইল কোর্ট করেছি। কিন্তু তাতে তেমন কোন কাজ হয়েছে বলে মনে হয়না। তবে আমাদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডার গুদামের কোন পরিসংখ্যান বা তথ্য নেই।
Leave a Reply