সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন
আকতার ফারুক শাহিন॥ বরিশাল বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ডাক্তার-নার্সসহ ২১ স্বাস্থ্যকর্মী। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন ও ১টিতে সেবা সীমিত করা হয়েছে। এছাড়া লকডাউন করা হয়েছে বরিশাল শেবাচিম (শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়) হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড।
আক্রান্তদের সাহচর্যে থাকা প্রায় আড়াইশ’ ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী হোম কোয়ারেন্টিনে। সবকিছু মিলিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় বরিশালে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন সবাই।
এমনিতেই জনবল সংকটে শেবাচিম হাসপাতাল। বেশ কয়েক বছর আগে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও এটি চলছে ৫০০ বেডের লোকবল দিয়ে। ২২৪টি চিকিৎসক পদের মধ্যে শূন্য ১২৯টি। নার্সসহ অন্যান্য সেবাকর্মীর ৫৫০ পদের মধ্যে ১৫৯টি শূন্য।
জনবলের এ তীব্র সংকটের মধ্যে করোনার থাবায় আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। একের পর এক ডাক্তার, নার্স আর স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে করোনায়। ১৩ এপ্রিল শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড-৩’-এ ভর্তি হন একজন রোগী।
প্রকৃত অসুস্থতার বিষয়টি লুকিয়ে ভর্তি হওয়ার দু’দিনের মাথায় তার শরীরে আসে করোনার উপসর্গ। ১৬ এপ্রিল ওই রোগীর ড্রপলেট (নমুনা) পাঠানো হয় পিসিআর ল্যাবে। পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। এরই মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওয়ার্ডটি লকডাউনের পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বপালন করা ডাক্তার নার্সসহ ২৪ জনকে।
পরে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায় সেখানে ডিউটি করা ৪ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক করোনা পজিটিভ। একজন মেডিকেল ছাত্র যিনি সেখানে চিকিৎসায় সহায়তা করছিলেন তার শরীরেও ধরা পড়ে করোনা। এ ঘটনার পর প্রথমে ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসককে বিরত রাখা হয় চিকিৎসা সেবা দেয়া থেকে।
পরে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় ২০৯ ইন্টার্ন চিকিৎসককে। শেবাচিম হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, বর্তমানে প্রায় সব ইন্টার্ন চিকিৎসক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ অবস্থার পাশাপাশি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা একজন নার্সের শরীরেও পাওয়া গেছে করোনার উপস্থিতি। বর্তমানে নগরীর কাশিপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তিনি।
বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগীয় সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, বরিশালে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো ৩৩ জনের মধ্যে ডাক্তারের পাশাপাশি নার্স, ব্রাদার, আয়া, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার রয়েছে। এছাড়া একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এবং একজন পরিবার পরিকল্পনাকর্মীও করোনায় আক্রান্ত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন চিকিৎসকের শরীরে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর ১৬ এপ্রিল থেকে ওই দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন।
এছাড়া পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত একজন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের শরীরে করোনা ধরা পড়ার পর সেখানে স্বাস্থ্য সেবা সীমিত করা হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাকেরগঞ্জে একজন চিকিৎসকের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা।
এভাবে শেবাচিম হাসপাতালের বাইরে এখন পর্যন্ত ৪ জন চিকিৎসক, ৩ জন নার্স, ১ জন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, ২ জন ব্রাদার ও ৩ স্বাস্থ্য সহকারীর শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এরা বিভিন্ন উপজেলায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বরিশাল জেলার বাইরে করোনা ধরা পড়েছে আরও ৪ স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ৬টি জেলা হাসপাতালে থাকা চিকিৎসকের ১ হাজার ১৩১টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬৬০ জন। ৪৭১টি চিকিৎসক পদই শূন্য।
সেখানে এভাবে যদি একের পর এক চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হন তাহলে বিষয়টি ভয়ংকর। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, সব জায়গাতেই এখন একই সংকট। ভরসা একমাত্র আল্লাহ।সুত্র,যুগান্তর
Leave a Reply