শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ বরিশাল নগরীসহ সদর উপজেলার সড়ক ও মহা-সড়কগুলোতে সন্ধ্যা নামলেই চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কারণ অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রা, মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যবহার। এ লাইটের আলো এতটাই তীব্র যে বিপরীত দিক থেকে কিছুই দেখা যায়না। ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। আর এই লাইট ব্যবহার বন্ধ করতে বরিশাল ট্রাফিক বিভাগ থেকে একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ধারাবাহিক অভিযান না হওয়ায় এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে, এই আলো সরাসরি চোখে লাগলে চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।
নগরীর সিএন্ডবি রোড এলাকার বাসিন্দা লাবু জানান, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে মোটরসাইকেলে চলাচল করেন তিনি। চালানোর এত বছরের অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্বেও তিনি এখন মোটরসাইকেল চালাতে ভয় পান। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলসহ প্রতিটি গাড়ির হেডলাইটের উপরের অংশে ছিল কালো রং করা। যাতে করে কারও চোখে আলোকরশ্মি না পড়ে এবং যারা গাড়ি চালায় তাদের গাড়ি চালাতে কষ্ট না হয়। এতে করে দূর্ঘটনা ও কম হত। বর্তমান যুগে এসে নানা প্রকার লাইটের আলো চোখে এমন ভাবে এসে পড়ে যে সামনে কি আসছে কিছুই বুঝা যায় না। এজন্য ভয়ে রাতে এখন আর গাড়ি নিয়ে বের হন না।
শুধু তিনিই না বর্তমানে যে কোন সাধারন ব্যক্তি রাতে নগরীসহ সড়ক-মহাসড়কে বের হলেই গাড়ির হেডলাইটের যন্ত্রনায় পড়বে। আর যানবাহনের হেডলাইটের এবং এলইডি লাইটের আলোর প্রভাবে রাতে চলা-চলের অনেকটা ঝুঁকি হয়ে পড়েছে। নগরীর সর্বত্র দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নানান ধরনের যানবাহনের সংখ্যা আর সেই সাথে বেড়ে চলছে এলইডি লাইটের ব্যবহার। যানবাহনের সাথে লাগানো এলইডি লাইটের আলো চলাচলের সময় তীব্র আলো চোখে পড়ায় সাধারন মানুষের পথ চলতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই আলো চোখে পড়া মাত্র যেন চোখ ধাধিঁয়ে যায়। ফলে প্রতিনিয়ত মানুষ সড়ক দূর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। দিন দিন যেন এই আলোর কারণে জনজীবনে র্দুভোগের শেষ নেই।
এলইডি লাইটের অধিক ব্যবহারের দিকে ট্রাফিক পুলিশসহ প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তার ধারাবাহিকতা না থাকায় এলইডি লাইটের ব্যবহার কমছে না। রাতে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক সদররোড, নতুন বাজার, বটতলা সড়ক, সাগরদী বাজার সড়কসহ প্রায় বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে সরোজমিন দেখা যায় প্রতিটি অটোভ্যান, অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য অনেক যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যবহার।
এছাড়া অন্য লাইট ব্যাবহারকারী যানবাহনের চালকরা এই এলিডি লাইটের আলোর কারণে দাড়িয়ে যায়, কারণ একটু বেপরোয়া হলেই ঘটবে দূর্ঘটনা। অপরদিকে নগরীর সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলকারী বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ কোন গাড়ির হেডলাইটের উপরের অংশে এখন আর কালো রং ব্যবহার করা হয় না। যার কারণে এ সকল গাড়ির আলো সরাসরি বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালক ও পথচারিদের চোখে ধাঁধিয়ে যায়। আর তখনই ঘটে দূর্ঘটনা।
একাধিক চালক বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা অটোভ্যান, অটোরিক্সা বা ইজিবাইকের এলইডি লাইটের আলোর কারণে চালক এবং সাধারন মানুষের পথ চলতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারনগুলোর মধ্যে এটিও একটি অন্যতম কারন বলা চলে। যা এখনই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
নগরীর বটতলা এলাকায় এক পথচারী বলেন, এখন নগরীর রিকশা-ভ্যানেও এলইডি লাইটের ব্যবহার বেড়েছে। বিপরিত দিক থেকে আসা গাড়ির ড্রাইভার বা মানুষ চলাচলের সময় যদি চোখে এই এলইডি লাইটের আলো পড়ে তাহলে কিছুই দেখা যায় না। এ কারণে আগে দেখতাম গাড়ির হেড লাইটের উপর কালো রং করা থাকত। কিন্তু এখন সারা রাত খুজলেও একটা গাড়ি পাবেন না যে গাড়ির হেডলাইটে কালো রং করা আছে। এজন্য রাস্তা পারাপারেও সমস্যায় পড়তে হয় বলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকদের মতে, এলইডি লাইটের প্রভাবে মানুষের চোখে কর্নিয়া থাকে এবং এই আলো সরাসরি চোখে লাগলে চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন এভাবে আলো চোখে লাগতে থাকলে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যাতে করে চোখে কম দেখা, ঝাপসা দেখাসহ আস্তে আস্তে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে সার্জেন্ট কামরুল বলেন, এলইডি লাইটের ব্যবহার বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। তিনি বলেন, যে সকল যানবাহনে এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয় সেগুলো আটক করে লাইট খুলে ফেলা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে অনেক সময় অভিযান কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হলেও অভিযান নিয়মিত চলছে।
এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। এ ব্যাপারে বিএমপি এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুল ভয়েস অব বরিশালকে বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশের সাথে আমরাও সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। এলইডি লাইট দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ উলে¬খ করে তিনি বলেন, গড়িয়ারপার এলাকায় নিয়মিত চেকপোষ্ট এর পাশাপাশি টহল টিমকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে। তাছাড়া মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল বন্ধের ব্যাপারেও তাদের অভিযান নিয়মিত আছে বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিএমপি ট্রাফিক পুলিশের টিআই-১ (প্রশাসন) শামসুল আলম ভয়েস অব বরিশালকে বলেন, আমরা আসলে এলইডি লাইটের ব্যবহার, হাইড্রোলিক হর্ন বা অন্যান্য যে সমস্যা আছে সেগুলি আমরা নিয়ন্ত্রন করার জন্য যা যা করা উচিৎ করছি। এলইডি লাইটের ক্ষতিকর দিক এবং চালকদের সচেতনতার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচী চালানো হয়। এছাড়া এই লাইটের ব্যবহার বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
Leave a Reply