রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ ‘বৃষ্টির পানিতে মোগো ঘর তলিয়ে গেছে, এখন মোরা থাকমু কই, মোগো থাহার কোন জায়গা নাই। ঘরের খাতা বালিশ সবকিছু ভিজে গেছে। মোগো দেখার কেউ নাই। মোরে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন। একখানা ঘরের ব্যবস্থা করি দিলে আল্লাহ তোমারে ভাল করবে।’ কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললেন সালেহা বেগম । তার এই আবেগ মাখা আর্তনাদ হয়তো কারো কাছে পৌঁছাবে না বলে মনে করেন তিনি। বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে থাকার মতো একটি ভালো ঘরও নেই। অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয় তাকে। তবুও তার ভাগ্যে জোটেনি একটি ঘর।
তিনি মনে করেন, টাকা ছাড়া ঘর পাওয়া যায় না। তাই টাকার অভাবে ঘরও পাচ্ছেন না। বর্তমানে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে জড়াজীর্ণ ঝুপড়িঘরে ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সালেহা বেগম।
বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউপির মালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক হাওলাদারের স্ত্রী সালেহা বেগম।
সালেহা বেগম বলেন, টাকার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা ঘরটিকে ঠিক করাতে পারিনি। কোনো রকম জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছি। বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে আর থাকা যায় না, বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। টানা বৃষ্টিতে ঘরের সব কিছু ভিজে গেছে। এখন আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই।
তিনি আরো বলেন, একটি ঘরের অপেক্ষায় এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আমাদের এই করুণ অবস্থা দেখেও তারা আমাদের কোনো সাহায্য করেননি। গ্রামের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পেলেও এ পর্যন্ত কিছুই জোটেনি আমাদের ভাগ্যে। এমনকি বয়স্ক ভাতাও পাচ্ছিনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একটি ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। আর তাদের থাকার একমাত্র জরাজীর্ণ ঘরটি টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে আসবাবপত্র ভিজে গেছে। জীবিকার তাগিদে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালাতেন সালেহা বেগম। সালেহা বেগম পাঁচ বছর ধরে শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন। যার কারণে ভারি কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে একরকম অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের।
এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের সংসারে তিন ছেলে থাকলেও প্রায় ৫ বছর আগে বড় ছেলে হোসেন হাওলাদার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বড় ছেলের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই বৃদ্ধা দম্পতি। এখন ছোট দুই ছেলে ইয়াসিন ও ইসহাক তাদের পরিবারে অসচ্ছলতার কারণে দিনমজুরের কাজ করছেন। তাদের অভাবের সংসারের টানা পোড়নে বৃদ্ধ মা বাবাকে ভরণ পোষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিদিন।
আপসোস করে সালেহা বেগমের স্বামী মানিক হাওলাদার বলেন, ‘একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েছি। তারা শুধু বলে এই কিছুদিন পরেই নাম নেওয়া হবে কিন্তু কত মানুষের নাম নিলো শুধু আমাদেরটাই নেওয়া হলো না।’
প্রতিবেশী জেসমিন বেগম জানান, একসময় তাদের সবকিছুই ছিল। কিন্তু বড় ছেলে হোসেন হাওলাদার ক্যান্সার রোগে মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। রাস্তার পাশে খাসজমিতে বসবাস করছেন। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন, তাদের ঘরটি একেবারেই জরাজীর্ণ।
তালতলীর ইউএনও কাওসার হোসেন জানান, ওই বৃদ্ধ দম্পতির ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করবো। তিনি যদি প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন হয় তাহলে তাদের একটি ঘরের ব্যবস্থা করব।
Leave a Reply