রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:সাবেক এমপি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের বিএনপির নেতৃত্বে শীর্ষে াকলেও তার গোটা পরিবার এখন আ.লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। আভাস পাওয়া গেছে, মনোনয়ন বঞ্চনার ক্ষোভে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন প্রাক্কালে তার ুই শক্তি চাচা-ভাতিজাকে আ.লীগে ঘটা করে যোগ য়োর পিছনেও ছিল তারই নির্দেশনা।
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের বৃহৎ একটি অংশ গত ১০ বছরে রাজনৈতিক হয়রানীর মুখে কারাগারে আসা-যাওয়া করলেও মেজবা উদ্দিন ফরহাদ ছিল আইনী জটিলতা থেকে নিরাপদ। এমনকি তার নিজ এলাকায়ও যাতায়াত নেই। আ.লীগের সাে তার এই আঁতাত করে টিকে াকার কৌশল গোপন থাকেনি, কিন্তু প্রতিবাদ করার প্লাটফর্ম না থাকায় সেখানকার বিএনপির রাজনৈতিক মেরুদন্ড নেই বললেই চলে।
সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর তার অতীত কর্মকান্ড হাইকমান্ডের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। এদিকে লের একটি বৃহৎ অংশ হাইকমান্ডের মনোভাব আঁচ করতে পেরে তার বিরুদ্ধে নানামুখি অভিযোগ পৌছে য়োর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বিকল্প নেতৃত্বের দাবি জানাতে যাচ্ছে বলে শোনা গেছে।
দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এমন তথ্য দিয়ে বলছে, এই পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়ে এলাকার রাজনীতিতে নতুন করে আসা নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর আবার লাইম লাইটে আসতে পারেন।
ইতোমধ্যে ক্ষুব্ধ অংশটি দলের নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরে ফের সক্রিয় করে একটি নতুন মেরুকরণ সৃষ্টিতে নুরুর রহমান জাহাঙ্গীরের সাে যোগাযোগ শুরু করেছে। যদিও সাবেক বিএনপির ঘরানার তুখোর এই নেতা বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
জানা গেছে, তিনি আপাতত ল বল করতে নারাজ, তবে বিএনপির নির্যাতিত নেতাদের পাশে থেকে এলাকার রাজনীতিতে নিজের অবস্থান পুনরায় তৈরি করার কৌশলী পথে হাটতে শুরু করেছেন। সূত্র জানায়, ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা বরিশাল (উত্তর) জেলা বিএনপির সভাপতি াকা অবস্থায় মেজবা উদ্দিন ফরহাদ আকস্মিক ২০০১ সালে সাংসদ নির্বাচনে লীয় মনোনয়নে জয়লাভ করেন।
সেই থেকে তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ সর্বশেষ থানা হিসেবে রূপান্তরিত কাজীরহাট। অভিযোগ রয়েছে, একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে তার সাে সাপে-নেউলে সম্পর্ক সাবেক লীয় এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু এবং সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ্ আবুল হোসাইনের। তারে কোণঠাসা করে রাখতে কেন্দ্রীয় নেত্রী সেলিমা রহমানের সহায়তা নেন মেজবা।
প্রথমদিকে মঙ্গু ও আবুল উভয়ে ফের লীয় প্রার্থীতা প্রত্যাশায় দলের সাথে যোগাযোগ রাখলেও পরবর্তীতে শারীরিক ও বার্ধক্যজনিত কারণে তারা রাজনীতি থেকে নির্বাসনে চলে যান।
বিপাকে পরে যায় দুই নেতার অনুসারীরা। এই সুযোগে মেজবা উদ্দিন ফরহা হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ এই ুই উপজেলা ও পৌর কমিটিসহ ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দরেও সরিয়ে নিজের অনুসারীদের পুনর্বাসন করেন।
এমনকি নিজ পরিবারের সদস্যদেরও উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে বিভিন্ন বাৎসরিক পর্ব এবং ঈদ-কোরবানী আসলেই ওয়ার্ড কমিটি ভাঙা গড়ার খেলা শুরু হয়।
সেখানেও বাণিজ্যের বিষয় রয়েছে বলে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। সালাম কবির সেলিম নামক এক ব্যক্তিকে লে গুরুত্বপূর্ণ ৫ লক্ষ টাকার লেনদেনের অভিযোগ দলের মধ্যে থেকেই উচ্চারিত হয়। তাকে বিদ্যান›ন ইউনিয়নের সহ-সভাপতি করার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক যোগদানের আয়োজনও ছিল ব্যাপক। প্রায় ুই লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে খাওয়া-াওয়ার পরই ঘটা করে নিয়ে আসা হয় লে।
অথচ দীর্ঘনি লের নেতৃত্বের অগ্রভাগে থাকা ত্যাগি নেতা কর্মীরে অবমূল্যায়ন স্বরূপ তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সেই তালিকাও কম ীর্ঘ নয়। মেহে›িগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আফসার হোসেন আলম, পৌর বিএনপির সভাপতি সাহবুদ্দিন হিমু ও শাহ এসআর আলমসহ মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ, আলী আহমদ ও আফসার চেয়ারম্যানসহ মকবুল হোসেনকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের পরই ভেঙে যায় এই ুই উপজেলার সাংগঠনিক কাঠামো।
এরে মধ্যে দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ প্রয়াত শহীদ জিয়াউর রহমানের আমলে জেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এই নেতার কারণে সেখানে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান ছিল, সাংগঠনিক সভা-সমাবেশও ছিল অব্যাহত।
কিন্তু তার নিজের পছন্দের নেতা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম ও গিয়াস উদ্দিন সেলিমকে মেহেন্দিগঞ্জের সভাপতি-সম্পাদক করার পাশাপাশি গাফ্ফার তালুকদার ও নুরুল ইসলাম রাজুর হাতে হিজলা বিএনপির নেতৃত্ব দেয়া হলে বিএনপি আর কোমড় সোজা করে াঁড়াতে পারেনি। এভাবে আ.লীগ সরকারের একটানা গত ১০ বছরে সেখানকার বিএনপির অস্তিত্ব শহর থেকে প্রকাশ পায় মেজবার বাসভবনমুখি নেতাকর্মীরে আসা-যাওয়া আর বৈঠকের মধ্য দিয়ে।
মেজবা উদ্দিন ফরহাদ ২০০১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে কয়েকদিন নির্বাচনী এলাকায় দেখা গেলেও পরবর্তীতে লীয় কর্মসূচি থেকে নিজেকে দূরত্বে রাখতেন। খোঁজ খবর নেয়ার তাগিে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গত ১০ বছরে আ.লীগের শাসনামলে সাংসদ থেকে সাবেক সাংসদ হয়ে যাওয়া এই নেতা মাত্র ৭ বার হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাও কিছু সময়ের জন্য।
কাজীরহাট এলাকাবাসী তাকে কখনো দেখেইনি, তাই তিনি ‘অদৃশ্যের নেতা’ বলে সেখানকার লীয় কর্মীরে মন্তব্য। অবশ্য হিজলা মেহেন্দিগঞ্জে তার এই ক’দিনের উপস্থিতির নেপথ্যে ছিল কোন বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা বিশেষ কোন ব্যক্তির জানাযায় অংশ নেওয়া।
মূলত তিনি বরিশাল শহরে বিএম স্কুল সংলগ্ন বাস ভবনেই তিন উপজেলার লীয় কার্যালয় হিসেবে রূপ দিয়ে সেখানে নেতাকর্মীরে নিয়ে লীয় বৈঠক আর খোশগল্পে সময় কাটান বলে অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় কর্মীরা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও বর্তমান সরকারবিরোধী আ›োলন সংগ্রামসহ নানা অজুহাতে একের পর এক মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গেলেও নেতা হিসেবে মেজবা কোন ভূমিকা না রাখায় নেতা-কর্মীদের তার ওপর ক্ষোভ ক্রমন্বয়ে পূঞ্জিভূত হয়। লের নেতৃত্বে থাকা একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি শুধু মেজবা নয়, সাধারণ সম্পাক আকন কুদ্দুসুর রহমানের ভূমিকাও রহস্যময়।
এই ুই নেতা সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকালীন সময় তারে আওতাধীন বরিশাল- ১, ২ ও ৩ আসনের কোন এলাকায় যাতায়াত তো করেইনি, এমনকি সেখানকার প্রার্থীদের সাথেও তাদের যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। বিশেষ করে মেজবা উদ্দিন ফরহাদ মনোনয়ন বঞ্চিত হলে তিনি ঢাকায় চলে যান। অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর মেহেন্দিগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে আহত হওয়ার খবরে বরিশালে ফেরেন এবং নেতৃবৃন্দের সাথে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
সেখানেও তার কৌশল ছিল বলে শোনা যায়। লের মধ্যে কথা উঠে মেজবা উদ্দিন ফরহা স্থানীয় আ.লীগের সাথে গোপন সখ্যতা রেখে চলার মাঝে মনোনয়ন বঞ্চিত হলে নতুন কৌশল নেন।
তার পরিবারের সদস্যদের আ.লীগের সাথে যুক্ত করে একদিকে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীকে মাঠ ছাড়া করার কৌশল নেন।
সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে তার আপন চাচা কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, ভাজিতা কাজী রুবেলের বিএনপি ছেড়ে আ.লীগে আনুষ্ঠানিক যোগদান। নিশ্চিত হওয়া গেছে, মেজবার নিজ বাড়ি মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুরের কাজী বাড়ির উঠানে ওই যোগদান অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বড়সরো ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গরু-খাসী কেটে এই আয়োজনে মহাজোটের প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।
ফলে প্রকাশ্যে চলে আসে আ.লীগের সাথে মেজবার আঁতাতের বিষয়টি। তার পরিবারের এক সদস্য জানান, যোগদান নির্দেশনা ও খাওয়া াওয়ার অর্থ ব্যয়ের সবকিছুই নেপথ্যে থেকে মেজবা যোগান নে। এতসব অভিযোগের সত্যতা আর ব্যাখ্যা, সব মেলে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী াকা ক্ষুব্ধ লীয় নেতাকর্মীরে কণ্ঠে।
অপর একটি সূত্র জানায়, এতদিন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে রাজনীতিতে মেজবার দ্বৈত পথচলা অজানা ছিল। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর মেজবার ফিরিস্তি কোন এক মাধ্যমে চলে যায় কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে।
সেখানে াবী উঠেছে- আর মেজবা নয়, নতুন নেতৃত্ব খেতে চায়। সেক্ষেত্রে নুরুর রহমান জাহাঙ্গীরকেই সম্ভাব্য আগামীর নেতা হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে বরিশালে অবস্থান নেয়া মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের এই নেতার সাে তিন উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ফায় দফায় বৈঠক আর খো সাক্ষাতে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
Leave a Reply