বরিশালে উত্তাল নদীর দুশ্চিন্তায় মানুষ Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: নতুন রুটের জন্য বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্যকে নির্বাচন সম্ভাব্য সময় জানালেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইবে বিএনপি বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত, রপ্তানিতে ধাক্কা মির্জাগঞ্জে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার ঝালকাঠিতে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় বাদী গৃহবধূকে কারাগারে প্রেরণ পিরোজপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি বাকেরগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে শ্বশুর বাড়ির জমি দখলের অভিযোগ বিশ্বে ক্ষমতাধর দেশ তালিকায় ঈর্ষণীয় স্থানে বাংলাদেশ সহিংসতা রোধে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে: প্রেস সচিব




বরিশালে উত্তাল নদীর দুশ্চিন্তায় মানুষ

বরিশালে উত্তাল নদীর দুশ্চিন্তায় মানুষ

বরিশালে উত্তাল নদীর দুশ্চিন্তায় মানুষ




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ মেঘনার শাখা নদী কালাবদর, ইলিশা আর তেতুলিয়া। তিন নদীর মোহনায় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রাম। সন্ধ্যা নামছে তিন নদীর মোহনায়। নদীর স্রোত ভাঙছে পাড়ে। মেঘনার গ্রাসে শাখা নদীগুলো যাই যাই অবস্থা। পড়ন্ত আলোয় শ্রীপুরের বাসিন্দা মাহামুদ হাসানের চোখে জল। নদী, ঢেউ, একটা বিদ্যালয়, প্রান্তিক মানুষ, তাঁদের বাঁচার চেষ্টা। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখে বোঝার উপায় নেই, মাটির সঙ্গে জলের, মানুষের সঙ্গে জলের, সম্পর্কটি এখানে ‘প্রাণঘাতী’! এই ভাদ্রে নদী কতটা উত্তাল হবে, সে দুশ্চিন্তায় সব মিলেমিশে এক, একাকার পাড়ে ধাক্কা খাওয়া ঢেউয়ে!

 

 

মাহামুদ হাসান যে ফাটলটার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আর কথা বলছিলেন আমাদের সঙ্গে, তার পেছনেই একটা ভাঙা ঘর। যেটি বাহেচর-শ্রীপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি আপৎকালীন এ বছরের শুরুতেই গড়ে উঠেছিল। বিদ্যালয়ের সামনে শ্রীপুর বাজারের রাস্তা। সেই রাস্তার ওপরে চেয়ার-টেবিল আর বেঞ্চসহ মালপত্র গোছানো। নদী ক্রমশ এগোচ্ছে। স্কুলের আসবাবপত্র জমা করে হাসান অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে পিছাচ্ছেন। আশি দশকের দিকে মাহামুদ হাসান স্কুলের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে তিনি ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

 

 

‘আগের স্কুলটি কোথায় ছিল?’ আমাদের এমন প্রশ্ন তাকে। উত্তর এলো ‘কোনটির কথা বলছেন’। তার পর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। আমরা বলছিলাম এই দিকে তাকান, আর একটা ফাটল দেখা যাচ্ছে। তার মানে এবার এই জায়গাটা থেকে যাবে। আমাদের কথায় হাসান নিরাসক্ত হয়ে বললেন, ‘কতই তো গেল! নতুন কী!’ যেখানে তেতুলিয়া স্রোতস্বিনী, সেই জায়গাটা দেখিয়ে হাসান বললেন ‘আগে আমাদের স্কুল ওখানে ছিল। একবার নয়, তিন বছরে স্কুল চারবার গিলেছে তেতুলিয়া। পিছিয়ে যেতে যেতে জমি-স্কুল ভবনের সবটুকু হারিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে। তখন বিদ্যালয় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে ছিল নদী’।

 

 

মেঘনা থেকে উৎপত্তি হয়ে কালাবদর, ইলিশা আর তেতুলিয়া নদী মিশেছে শ্রীপুরে। মেঘনা যেতে-যেতে দুই প্রান্তেরই মাটি বুভুক্ষের মতো গিলেছে। এখন যেখানে শ্রীপুর লঞ্চঘাটে নদীর ঘোলাটে স্রোত বয়ে যাচ্ছে, সেখানে একসময় বিশাল বাজার ছিল, স্কুল, মাদরাসা আর মসজিদ ছিল। আমরা যখন শ্রীপুর বাজারে কথা বলছিলাম, তখন পাশেই গাছ কাটা হচ্ছিল, বাসার সমস্ত জিনিস গোছানো হচ্ছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ভাঙনের কারণে বাসিন্দাদের অন্যত্র যাওয়ার তোড়জোড় চলছে। সেদিকে তাকিয়ে তখন হাসান বলছিলেন, আর কিছুদিনের মধ্যে এই জায়গাটাও তো নদীর পেটে যাবে।

 

 

তিন বছরে চারবার

 

স্বাধীনতারর আগে মেঘনা নদীর প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ছিল মেহন্দিগঞ্জ উপজেলা। ১৯৭৩ সালে তিন নদীর মোহনা থেকে প্রায় কিলো পাঁচেক দূরে বাহেরচর-শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতেই দীর্ঘ লম্বা টিসশেড ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। আশির দশকের দিকে স্কুলের পাশেই দ্বিতল সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। স্কুলের কার্যক্রম নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হবার পরে পুরাতন টিনশেডে চরবগি এ রব দাখিল মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরাতন জরাজীর্ণ সাইক্লোন শেল্টারের বিপরীতেই নতুন স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারের দ্বিতল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। তখনো নতুন ভবন থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নদী ছিল।

 

 

নতুন ভবনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর পরে মেঘনা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। মাত্র দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর নতুন সাইক্লোন শেল্টারটি হঠাৎ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে প্রাথমদিকে গড়ে ওঠা টিনশেড ঘরে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৮ সালের জুনের দিকে টিনশেড ভবনটিও মেঘনার পেটে চলে যায়। আগেভাগেই স্কুলের আসবাবপত্র পুরাতন জনাজীর্ণ সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটিও ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে নদীর পেটে চলে যায়। স্কুলের আসবাপত্র ঠাঁই শেলে রাস্তার ওপর।

 

 

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দি চিলড্রেন ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিন লাখ টাকা দিয়ে আপতকালীন স্কুলঘর নির্মাণে সহযোগিতা করে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আরো দ্বিগুণ টাকা তুলে প্রায় ৯ লাখ টাকায় মেঘনা থেকে প্রায় কিলোমিটার দূরে আধাপাকা স্কুলঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু স্কুল যতই মেঘনা থেকে দূরে সরানো হচ্ছে, তার চেয়ের কয়েকগুণ গতিতে মেঘনা স্কুলের দিকে ছুটে আসছিল। করোনাকালে স্কুলের খুব কাছাকাছি মেঘনা চলে আসে। স্কুলের জমি এই বছরের জুলাইয়ের দিকে চলে গেছে নদীতে। তার আগেই নদী থেকে স্কুল রক্ষার জন্য স্কুল ঘরটি খুলে ফেলা হয়। দ্রুত আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলা হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে চরবগি এ রব দাখিল মাদরাসায় আসবাবপত্র গুছিয়ে রাখা হয়েছে।

 

 

প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব বলেন, নতুন সাইক্লোন শেল্টারটি ২০১৭ সালের অক্টেবরের শেষ দিকে নদীতে ভেঙে যায়, তখন স্কুলে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। ওই ঘটনার পরপর তিনবার স্কুলের স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়। স্কুলভবন বিলীন হবার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক পার্শ্ববর্তী স্কুলগুলোতে চলে যায়। চলতি বছর ২৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। করোনার বন্ধে স্কুল নদীতে বিলীন হওয়ার প্রভাবে আরো শিক্ষার্থী কমতে পারে। স্কুল খুললে শিক্ষার্থীদের কোথায় পড়াব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তিনি আরো বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদিন ৩৪ শতাংশ জমি দান করেছেন। সেটি নিচু হওয়ায় ভরাটের জন্য অন্তত দুই লাখ টাকা প্রয়োজন।

 

4

মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা আসনের সাংসদ পঙ্কজ নাথ বলেন, বাহেরচর শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আনুষ্ঠনিকতা শেষেই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD