শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
নিত্যপণ্যের বাজারে কমতির দিকে রয়েছে পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম। টানা বৃষ্টি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরবরাহ কমায় রাজধানীতে এখন সবজির দাম চড়া। বেড়ে যাচ্ছে পরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে বেড়ে যাচ্ছে মসলাপাতির দাম। চাল, আটা, ভোজ্যতেল, ডাল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভরা মৌসুমেও ইলিশের সরবরাহ নেই বাজারগুলোতে। গরু ও খাসির মাংস স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে দেশী জাতের মাছের দাম। রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট এবং মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ সপ্তায় আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দেশী পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তায় প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারে ৫০-৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে দেশী পেঁয়াজ। একইভাবে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৩৫-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৫০ টাকায়। যদিও ডিম আগের মতো বাড়তি মূল্যে প্রতিহালী ৩৪-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সবজির দাম। বাজারে ৪০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রাবণের টানা বৃষ্টির কারণে সবজিক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এ কারণে সবজির সরবরাহ কমে গেছে, বেড়েছে দামও। তবে সবজির দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচের দাম।
গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে বেশিরভাগ সবজির কেজি ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন ৪০ টাকার নীচে কোনো সবজি নেই। সবজির এ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনেক চাষীর সফলের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আবার অনেকে সবজি তুলতে পারছেন না।
এছাড়া দাম বাড়ার পিছনে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনেরও কিছুটা প্রভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মতে, অনেকেই সবজি বোঝাই পরিবহন আনতে ভয় পাচ্ছে। যে কারণে চাহিদার তুলনার বাজারে সবজির সরবরাহ কম। ফলে দাম বেড়েছে। বাজারে এখন পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, কাকরল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, করলাসহ প্রায় সব সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে পটল, ঝিঙা, ধুনদল, কাকরল, করলা বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। তবে সবকটির দাম ৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। তবে বেগুন ও পেঁপের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ দুটি সবজি ২০-৩০ টাকা কেজির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০-৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁকরল ও করলা। আগের সপ্তাহে এ সবজি দুটির কেজি ছিল ২৫-৩০ টাকা। ঝিঙা ও ধুনদলের দামও বেড়ে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এ সবজি দুটি ২০-২৫ টাকার মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল।
গত সপ্তাহের মতো সবজির মধ্যে বাজারে এখনও সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো এবং বরবটি। প্রায় সব বাজারেই পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহেও এ সবজিটির দাম এমনই ছিল। তবে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে এখন ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মো. খলিলুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে এখন সব সবজিই পাওয়া যাচ্ছে, তবে সরবরাহ কিছুটা কম। যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশকিছু ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এর সঙ্গে এখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। সবকিছু মিলিয়ে সবজির দাম বেড়ে গেছে। অনেক পরিবহন মালিক ভয়ে ঢাকায় সবজি বহন করা পরিবহন পাঠাচ্ছেন না। যে কারণে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। এদিকে একমাসের বেশি সময় ধরে কাঁচামরিচ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা কেজি। তবে শুক্রবার মরিচের দাম কিছুটা কমে ১০০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কোরবানি সামনে রেখে মসলাপাতির দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়, অথচ গত সপ্তাহে এটি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি করতে দেখা যায় ১৮৫০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি এলাচ ১৫৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে যা আগে বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকায়। জিরা তার্কি ৪১০ ও ইন্ডিয়ান জিরা ৩১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এর আগে তার্কি জিরা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়, ইন্ডিয়ান জিরা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকায়।
এদিকে, ভরা মৌসুমেও এবার বাজারে ইলিশের সরবরাহ নেই। সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে ইলিশের দামও চড়া। মাঝারি সাইজের ইলিশের জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। এছাড়া গরু ও খাসির মাংস আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশী জাতীয় সব মাছের দাম এখন চড়া। প্রতিকেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১২০০ টাকায়। এছাড়া রুই ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply