শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে শনিবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ সেনা সদস্য নিহত এবং আরও অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং অন্তত ৬ জন শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, সেনাবাহিনীর একটি গাড়িবহরের মধ্যে একটি বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি ঢুকে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, কাছাকাছি দুটি বাড়ির ছাদ উড়ে যায়। ওই ভবন দুটিতে বসবাসরত কমপক্ষে ৬টি শিশুও গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে সেনাবাহিনীর চার সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে পেশোয়ারের সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) একটি উপশাখা, হাফিজ গুল বাহাদুর আর্মড গ্রুপ।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন জোরদার হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান অঞ্চলে জঙ্গি হামলার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পাকিস্তানে ২০২৪ সালেই ৪৪টি বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যাতে ৬৮৫ জন সেনা এবং ৯২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। অন্যদিকে, সন্ত্রাস দমন অভিযানে ৯৩৪ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে জানা গেছে।
এই ঘটনার পর দেশটির সরকার এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আরও তীব্র ও ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে সবার আশ্বস্ত হওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিনের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকা নিয়েও মানুষের ভয়-ভীতি রয়েছে। রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধুমাত্র সামরিক অভিযান নয়, এই অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিস্তৃত ও মানবিক কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে আরও সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এখন এক বড় জাতীয় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
Leave a Reply