রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ বরগুনার আমতলীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে (ওএসডি) শাস্তিমূলক বদলী এবং তাকে শোকজ করা হয়েছে।
মূলত তার অনিয়ম আর দুর্নীতির কারনেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে দ্বিতীয় ধাপে উপজেলায় হতদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ ৩৫০টি ঘরের নির্মাণ কাজ যথা সময়ে শেষ করতে না পাড়ায় ওই ঘর গুলোতে উঠতে পারছেনা হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারগুলো। তারা নির্মাণাধীন ঘরের পাশে ছাপড়া দিয়ে ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ এর অধীনে দ্বিতীয় ধাপে উপজেলায় হতদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ ৩৫০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে গুলিশাখালী ইউনিয়নে ১১০টি, কুকুয়া ইউনিয়নে ৩০টি, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নে ২৫টি, হলদিয়া ইউনিয়নে ২৩টি, চাওড়া ইউনিয়নে ৭২টি, আমতলী সদর ইউনিয়নে ৮১টি ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় আমতলী সদর ইউনিয়নে ৮১টি ঘরের মধ্যে ২৫টি এবং গুলিশাখালী ইউনিয়নে ১১০টি ঘরের মধ্যে ২৫টি মোট ৫০টির মত ঘরে হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারগুলো উঠতে পারলেও বাকী ৫টি ইউনিয়নের ৩০০টি ঘরে হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারগুলো উঠতে পারেনি। তারা নির্মাণাধীন ঘরের পাশে ছাপড়া দিয়ে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে আজ দুপুরে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী ও নাইয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, এ ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১১০টি ঘরের অধিকাংশের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ঘর পাওয়া অনেকেই নির্মাণাধীন ঘরের পাশে ছাপড়া দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বসবাস করে আসছে। বেশ কিছু ঘরের কাজ কেবল শুরু হইছে। এখনো অনেক ঘরের ছাউনিসহ দরজা জানালা লাগানো বাকী রয়েছে। আবার অল্প কয়েকটি ঘরের ছাউনি দেয়া হলেও পলেস্তারা ও রংয়ের কাজ বাকী আছে। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে অনেক ঘরের কাজ বন্ধও রয়েছে।
ঘর পাওয়া ভুক্তভোগীরা গুলিশাখালীর নাইয়াপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ভূমিহীন আনোয়ার ঘরামী, ফিরোজা বেগম ও জানায়, কবে যে এই ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে তা তাদের জানা নেই। এখন বর্ষার কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় উপকারভোগী পরিবারগুলো নির্মাণাধীন ঘরের পাশে টিনের ছাপড়া দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
গুলিশাখালী গ্রামের বাসুদেব দাশ ভয়েস অব বরিশালকে বলেন, আমার বরাদ্দকৃত ঘরের কাজ চলমান থাকায় আমি আমার স্ত্রী এক ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে নির্মাণাধীন ঘরের পাশে ছাপড়া দিয়ে আজ দুই মাস ধরে বসবাস করছি।
অপরদিকে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই একই ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের হামিদা বেগমের ঘরের সামনের পিলার ধসে পড়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
তবে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অ্যাড. মো. নূরুল ইমলাম মিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই গ্রামে হামিদা বেগম নামে কাউকেই কোন ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমার ইউনিয়নের ১১০টি ঘরের মধ্যে ২৫টি ঘরে উপকারভোগী পরিবারগুলো উঠলেও বাকী ঘরগুলোর কাজ চলমান থাকায় সেই ঘরে উপকারভোগী পরিবারগুলো উঠতে পারেনি। বৃষ্টিতে তারা কিছুটা কষ্টের মধ্যে আছেন।
আমতলী সদর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, এ ইউনিয়নে বরাদ্দ ৮১টি ঘরের মধ্যে ২৫টি ঘরে উপকারভোগী পরিবারগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করছেন। বাকী ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান আছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা জানায়।
আমতলী সদর ইউনিয়নের নতুন ঘর পাওয়া উপকারভোগী চলাভাঙ্গা গ্রামের আ. মোতালেব ও দক্ষিণ আমতলী গ্রামের ঝর্না বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাকা ঘরে আমরা এখন পরিবার- পরিজন নিয়ে বসবাস করি। গরীবের বন্ধু শেখ হাসিনাকে আল্লাহ যেন দীর্ঘায়ু দান করেন।
এছাড়া বাকী ৫টি ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় কোন উপকারভোগীরা ওই ঘরে উঠতে পারেনি। ওই সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানায়, তাদের ইউনিয়নে নির্বাচন থাকার কারণে কিছুদিন পর্যন্ত ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিলো। এজন্য নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুতই ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করে উপকার ভোগীদের মাঝে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আশ্রয়ণের নীতিমালা অনুযায়ী হতদরিদ্র পরিবারগুলো যাতে দ্রুত ঘরে উঠতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া মাত্রই আমরা উপকারভোগীদের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করবো।
Leave a Reply