বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন
এম. কে. রানা, নিজস্ব প্রতিনিধি॥ কীর্তনখোলার তীরে বেড়ে ওঠা একটি বৈচিত্র ও ঐতিহ্যের শহর বরিশাল। এ শহরকে সুন্দর ও সমৃদ্ধশীল করতে বিভাগীয় শহর বরিশালকে ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। বরিশাল সিটির প্রধান সড়কগুলো বাদ দিলে অধিকাংশ সড়কই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে ভরে গেছে সড়কগুলো। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হলেও সড়ক সংস্কারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে নগরবাসীর অভিযোগ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবী, ওয়ার্ডের সার্বিক অবস্থা সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। আর সিটি কর্পোরেশন সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে তিনটি টেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে এবং এছাড়াআগামী দুই-এক মাসের মধ্যেই বেশিরভাগ সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।
সূত্রমতে, ১৯৭৩ সালে বরিশাল পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। কালের পরিক্রমায় ১৯৮৫ সনে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভাতে এবং ২০০২ সালের ২৫ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে বর্ধিত হয়ে এর আয়তন দাঁড়ায় ৫৮ বর্গকিলোমিটারে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ও ওয়ার্ড সংখ্যা ৩০টি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৩ টি অঞ্চলের মাধ্যমে প্রশাসনিক ও সেবামূলক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএম কলেজ রোড, হাসপাতাল রোড, সদর রোড, হাতেম আলী কলেজ রোড ব্যতীত প্রায় সকল সড়কের মধ্যেই খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। যা জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। বিশেষ করে কাউনিয়া প্রধান সড়ক, অধ্যক্ষ ইউনুস খান সড়ক (খালপাড় সড়ক), রুপাতলী, বিসিক রোড, হাটখোলা, পোর্টরোডসহ অধিকাংশ সড়কেই ইটপাথর উঠে গিয়ে অসংখ্য বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে ব্যস্ততম এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। নগরবাসীর অভিযোগ, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নগরীর সড়কগুলো খারাপ হতে থাকে। শুরুর দিকে সামান্য সংস্কার করলে সড়কগুলোর এমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সড়ক সংস্কারে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার কিছু সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে সেগুলো আরও খারাপ হয়ে গেছে।
এছাড়া নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এদিকে চলাচলের অযোগ্য ভাঙা সড়ক এবং খাল ও ড্রেন সংস্কারের দাবিতে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, নগরীর ৫৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৯০ শতাংশ চলাচলের অনুপযোগী। আর নগরীর ২২ খাল উদ্ধার বা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় বর্ষায় বা জোয়ারের পানিতে নগরবাসীর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কাউনিয়া নিবাসী মামুন পাটোয়ারী বলেন, নগরীর ১নং ওয়ার্ডের অধ্যক্ষ ইউনুস খান সড়ক (খালপাড় সড়ক) ও ২নং ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ দুটি সড়ক অনেকটা বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় ভারি ভারি যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। টেকসই উন্নয়ন না করায় এসড়ক দুটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি দাবী করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে উদাসীন। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ দাবী করেন সড়ক সংস্কারের জন্য একাধিকবার লিখিতভাবে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মূর্তজা আবেদীন জানান, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে শুধু সড়কই নয়, ওয়ার্ডের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে তা সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা। আর তিনি সে দায়িত্ব যথাযথই পালন করেছেন।
বরিশাল নগর সৌন্দর্য রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়কগুলোর এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দু’একটি সড়ক বাদ দিলে পুরো নগরীর সড়কের অবস্থাই খারাপ। বিগত সময়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কের এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে তিনি জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করে বলেন, ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকদের প্রতি প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির দায়বদ্ধতা রয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র এ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, প্রকৌশলীদের ভুলের কারণে উন্নয়ন কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে সম্প্রতি নগরীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন কাজের টেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আগামী দু’এক মাসের মধ্যে নগরীর অধিকাংশ সড়কের সংস্কার কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply