বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম তদন্তে দ্বিতীয় দফায় বরিশাল এসেছেন নির্বাচন কমিশনের তদন্ত দল। প্রথম দফায় ৩০টি কেন্দ্রে অনিয়ম তদন্তের পর এবার দ্বিতীয় দফায় আরও ২৬টি কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্ত করছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম কেন্দ্রে জালিয়াতি, ভোট দিতে বাঁধা প্রদান, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, জালভোট প্রদান, গননায় গরমিলসহ প্রার্থীদের নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এই তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচনের এক মাস পর তদন্ত কমিটির কাছে একটি ইভিএম কেন্দ্রের এসডি কার্ড (চিফস) জমা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তদন্ত কমিটির আহবায়ক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমান জানান, এসব অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে তারা অভিযুক্ত কেন্দ্রের সংশ্লিস্টদের সাক্ষ্য নিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মগুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হবে। আজ শুক্রবার ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের দ্বিতীয় দফার তদন্ত কাজ শেষ করায় বরিশাল সিটি নির্বাচনে এ নিয়ে মোট ৫৬টি কেন্দ্রের অনিয়মের তদন্ত করলো কমিশন।
বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের ৪ সদস্যের তদন্ত দল গত বৃহস্পতিবার বরিশালে এসে ২৬টি কেন্দ্রের অনিয়মের তদন্ত শুরু করে। আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে চলা তদন্ত কার্যক্রমে কমিটির আহবায়ক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মো. ফরহাদ হোসেন, ঢাকার নির্বাচন প্রশিক্ষন ইনিষ্টিটিউটের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষন) সহিদ আব্দুস ছালাম এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (সংস্থাপন-২) মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত দলের একাধিক সূত্র জানায়, অভিযোগ তদন্তের প্রয়োজনে তারা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন।
বৃহস্পতিবার তদন্ত চলাকালে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ২টি কেন্দ্রের চরম অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে। ওই ওয়ার্ডে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়া ৭৮ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এটিএম কামরুজ্জামান নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাস পর তদন্ত কমিটির কাছে ইভিএম কেন্দ্রের এসডি কার্ড (চিফস) জমা দেন। দীর্ঘ ১ মাস চিফসটি তার কাছে থাকার পর সেটি জমা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তদন্ত দল।
একই ওয়ার্ডের ৭৭ নম্বর ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন। তদন্ত দলকে তিনি লিখিতভাবে জানান, তার ওয়ার্ডের ৭৭ ও ৭৮ নম্বর ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বি ঠেলাগাড়ী প্রতীকের প্রার্থীকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্য ভোট কেন্দ্রের ভবন পরিবর্তন করা হয়েছে। ৭৭ নম্বর কেন্দ্রে নৌকার ব্যাজ পরিহিত লোকজন ‘ঠেলাগাড়ি’ প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ধারী এক ব্যক্তি ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের পক্ষে ভোটে কারচুপি করেছেন।
ইভিএম নিয়ে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা কে.এম শহিদুল্লাহ সহিদও।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২) খোন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্ত করছেন। নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ইভিএম নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তাদের কাছে এসডি কার্ড (চিফস) জমা দিয়েছেন। ওই চিফসে ভোটার তালিকা থাকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত দল নির্বাচন কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এই তদন্তের উপর ভিত্তি করে ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হবে কিনা সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। সিটি নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, দ্বিতীয় দফায় এবার ২৬টি কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্ত শেষ হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় ৩০টি কেন্দ্রের অভিযোগ তদন্ত হয়েছে।
প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহন হবে কি না।
Leave a Reply