রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনা প্রতিনিধি॥ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় যশ ও পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে বরগুনার নদ-নদীতে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে যশের প্রভাবে বরগুনায় দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে।
মঙ্গলবার বরগুনার চরকলোনী, পশ্চিম গুলবুনিয়া, বড়ইতলা এবং ঢালভাঙাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, উঁচু জোয়ারের কারণে নদীর পানিতে এসব এলাকার লোকালয় সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গেছে বেশ কিছু ঘের ও পুকুরের মাছ। বাইনচটকি, বড়ইতলা ও পুরাকাটা ফেরি ঘাটের সংযোগ সড়কসহ গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
ফুলঝুরি এলাকার বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণের টনক নড়ে। বেড়িবাঁধ ঠিক না করায় মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। প্রতিদিন দুইবার জোয়ার শেষে পানিতে ভাসতে হয়। যত দ্রুত সম্ভব এলাকার ভাঙা বাঁধগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।
বড়ইতলা এলাকার বাসিন্দা মো. পনু মিয়া বলেন, উঁচু জোয়ার হলে আমাদের এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এলাকার হাজারো মানুষের ঘরে আজ রান্না হবে না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে জেলার ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মাহতাব হোসেন বলেন, বরগুনার নদ-নদীতে আজ ৩.৩২ মিটার উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। যা বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপরে।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইসার আলম বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। উঁচু জোয়ারের কারণে এসব বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও উঁচু জোয়ারের কারণে বাঁধের বাইরের এলাকাগুলোও প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, রোববার রাত থেকেই বরগুনায় ঝড়ের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। রাত ১০টার পর থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড় যশ মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। দুর্যোগের সময় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে জেলায় ৬৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে সেগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য শুকনো খাবার, সুপেয় পানি মজুত রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল উপকূলীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করতে কাজ করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় এক কোটি ৩১ লাখ টাকা মজুত রয়েছে। খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩৫৮ মেট্রিক টন চাল মজুত আছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য জেলায় ছয়টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সম্ভাব্য ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ জরুরি মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় থেকে খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।
Leave a Reply