সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ প্রকল্প তৈরিতেই ত্রুটি। যে কারণে নির্মাণকাজ চলমান থাকার মধ্যেই ধসে পড়ছে হেরিংবন সড়ক। বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-শরণখোলা-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের শরণখোলা অংশের পাঁচ কিলোমিটার প্রসস্তকরণ কাজের এই অবস্থা। প্রায় দেড় কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ এখন শেষের পথে। এরই মধ্যে যানবাহনের চাকায় বেশির ভাগ স্থানে দেবে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধানসাগর ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া কাঠেরপুল থেকে রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এই পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ প্রসস্ত করার জন্য ছয় ফুট হেরিংবন সড়ক নির্মাণের প্রকল্পটি তৈরি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। টেকসই সড়ক নির্মাণ করতে যেখানে আট থেকে ১২ ইঞ্চি বালু থাকার কথা, সেখানে ধরা হয়েছে মাত্র তিন ইঞ্চি বালু। তা ছাড়া হেরিংবনের দুই পাশে কোনো মাটি ভরাট রাখা হয়নি। এভাবে এক কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রাক্কলন (সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব) ধরে প্রকল্পটি তৈরি করে সওজ। যার ফলে সড়কটি নির্মাণের আগেই ধসে ও দেবে যাচ্ছে।
প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত যাত্রী ও মালবাহী ভারি যানবাহন চলাচল করে। পূর্বের কার্পেটিং সড়কের দুই পাশ খসে সরু হয়ে যাওয়ায় সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য আপাতত ইটের হেরিংবন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু যে সুবিধার জন্য এই সড়ক করা হচ্ছে উল্টো তা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়ক প্রস্তকরণের এই কাজ বাস্তবায়ন করছে বাগেরহাটের মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র তিন ইঞ্চি বালু দিয়ে তার ওপরে ইট বসানো হচ্ছে। যেসব স্থানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে গাড়ির চাকায় দেবে গিয়ে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এ ছাড়া পাশে মাটি না থাকায় বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়েছে।
এ সময় ধানসাগর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা অজিত কির্তনিয়া ও মনিন্দ্র হালদার বলেন, কাজের মান খুবই খারাপ। কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙে পড়ছে। এখন যানবাহন ও মানুষকে আরো বেশি দুর্ভোগে পড়তে হবে।
ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম টিপু বলেন, এভাবে কাজ করার চেয়ে না করাই ভালো ছিল। এতে সরকারে সম্পূর্ণ টাকাটাই জলে যাবে। বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
কাজের তদারক কর্মকর্তা বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রিপন মিয়া বলেন, আমার যোগদানের আগে এই কাজের প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্পে মাত্র তিন ইঞ্চি বালু ধরায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের করণে বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। তবে যেসব স্থান দেবে বা ভেঙে গেছে তা ঠিক করিয়ে দেওয়া হবে।
বাগেরহাটের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমিও দেখে এসেছি। আসলে বৃষ্টির কারণে সড়ক দেবে যাচ্ছে। তবে সব কাজ সঠিকভাবে না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের মেইনটেনেন্স ফান্ড থেকে আপাতত এই কাজ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে রিজিওনাল হাইওয়ের জন্য প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।
কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মশিউর রহমান সেন্টু বলেন, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী-ই কাজ করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। এসব ত্রুটি ঠিক করে দেওয়া হবে।
Leave a Reply