রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সমুদ্র বন্দর সমূহকে ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৭৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এই দু’উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আমতলী উপজেলায় ১১১টি ও তালতলী উপজেলায় ৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া দু’উপজেলায় ব্যবহার অনুপযোগী ও ভাঙা কোনো সাইক্লোন শেল্টার না থাকলেও ১১টি সাইক্লোন শেল্টার বেড়িবাঁধের বাইরে রয়েছে। এরমধ্যে আমতলী উপজেলার ১০টি সাইক্লোন শেল্টারে যাতায়াতের পথ না থাকলেও তালতলী উপজেলার অধিকাংশ সাইক্লোন শেল্টারে কাঁচা রাস্তা পার হয়ে যেতে হয়। পাশাপাশি দু’উপজেলার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি ৩৪৬০ পুরুষ ও মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতন করতে প্রচার- প্রচারণা শুরু করছেন।
আমতলী উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মো. কে এম মাহাতাবুল বারী বলেন, ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” মোকাবেলায় উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি ২৩০০ পুরুষ ও মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রাম-গঞ্জের মানুষদের সচেতন করতে কাজ শুরু করছেন।
অপরদিকে সমুদ্রঘেষা পায়রা (বুড়িশ্বর) ও আন্ধারমানিক দু’টি বৃহৎ নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আমতলী ও তালতলী উপজেলা অবস্থিত। তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া, কড়াইবাড়িয়া, শারিকখালী, ছোটবগী, বড়বগী, নিশানবাড়িয়া ও সোনাকাটা ইউনিয়ন সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া, আমতলী সদর, আমতলী পৌরসভা, চাওড়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন পায়রা নদীর তীরবর্তী স্থানে হওয়ায় এ এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় একাধিক সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে আমতলী ও তালতলী উপজেলায়। এতে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর আমতলী ও তালতলীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরে আমতলী ও তালতলীর ২৯৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। নিখোঁজ রয়েছে ৪৯ জন এবং আহত হয় ২৫০০ জন। ওই সময় সবচেয়ে বেশী প্রাণহানী ঘটেছিল তালতলীর বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নিদ্রারচর, সখিনা, আশারচর, জয়ালভাঙ্গা ও ফকিরহাট এলাকায়। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকা ও সচেতনার অভাবে হতাহতের সংখ্যা বেশী হয়েছে বলে এলাকার সচেতন মহল দাবি করেন।
তালতলীর সোনাকাটা ইউপি সদস্য আবদুস ছালাম হাওলাদার বলেন, আমাদের এলাকাটি সমুদ্রের খুব কাছাকাছি। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় বন্যার সময় সকলে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারছে না। এ কারণে হতাহতের সংখ্যাও বেশী হয়। তাই এখানে আরো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও সচেতন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার মিয়া মুঠোফোনে বলেন, উপজেলার সকল সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এ উপজেলার মধ্যে আশারচরে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। উপকূলের জনগোষ্ঠিকে সচেতন করা ও আরো পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইয়াস মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছি। উপজেলার সকল সাইক্লোন শেল্টারগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত শুকনা খাবারের মজুদ রাখার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।
Leave a Reply