সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনাসহ উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবন চলে অতি কষ্টে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগের সঙ্গে তাদের বসবাস। এখানকার অধিকাংশ মানুষ মৎস্যজীবী। তাই জীবিকার তাগিদে তাদের ছুটতে হয় অথৈ সাগরে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাছ শিকারে গিয়ে প্রায়ই নিখোঁজ হন তারা। এমন চিত্র এ প্রান্তিক জনপদে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। উপকূল দিয়ে বয়ে যায় ভয়াল ঘুর্ণিঝড় সিডর। এতে পাথরঘাটা উপকূলে প্রাণহানি ঘটে অনেক মানুষের। সেই সময় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অসংখ্য জেলেরও প্রাণহানি ঘটে। অনেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে আসলেও নিখোঁজ হন অনেকে। আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। সিডরের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাবু ফকিরের মতো অসংখ্য জেলের সন্ধান মেলেনি। বেঁচে আছে, না মারা গেছেন তাও জানা যায়নি। একই ট্রলারে থাকা জাকির হাওলাদার, ইসমাইল হোসেন, হারেজ বিডিয়ারসহ একই এলাকার ৯ জন আজও ফিরে আসেনি।
একমাত্র ছেলে মো. বাবু ফকিরের উপার্জনেই চলতো মা ছালেহা ও বাবা আজিজ ফকির ফকিরের সংসার। পূর্ব পুরুষের পেশা ধরে রাখতে এবং পেটের জ্বালায় সাগরে মাছতো ধরতেই হবে। একমাত্র ছেলে সাগরে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। ২০০৭ সালের ভয়াল ১৫ নভেম্বর সিডরে ছালেহা বেগমের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আজও একমাত্র ছেলেকে ভুলতে পারেনি ছালেহা। প্রতি মুহূর্ত নীরবে চোখের জল ফেলেন ছালেহা।
একমাত্র ছেলে বাবু ফকির সাগরে যাওয়ার আগ মুহূর্তের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছালেহা। স্বামীর অসুস্থতার কারণে নিজের কাঁধেই সংসারের দায়িত্ব। কাজের ফাঁকে ছেলের কথা মনে হলেই চোখের জল ফেলেন । ছেলের ফেরার অপেক্ষায় আজও পথের দিকে তাকিয়ে আছেন ছালেহা।
ষাটোর্ধ্ব ছালেহা বেগম বলেন, বাবু সাগরে যাওয়ার সময় একটি বড় পোমা (পোয়া) মাছ দিয়ে গেছে খাওয়ার জন্য। আর বলে গেছে, এবার সাগর থেকে আসার সময় বড় ইলিশ মাছ নিয়ে আসবে। কিন্তু ইলিশ মাছ দিয়ে কী করব, আমার ছেলেই তো আসেনি। বিয়ে করার ১০ মাস পর সাগরে গিয়ে ছেলে আর ফিরে আসেনি। আমার ছেলে সিডরে নিখোঁজ হওয়ার কয়েকমাস পর পুত্রবধূর গর্ভে সন্তান আসে। কিন্তু সেই সন্তান গর্ভেই মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, একমাত্র ছেলের আয়েই সংসার চলতো। স্বামী কাজ করতে পারছে না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি, আর বনের মধ্যে খালে মাছ ধরি, তা বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই। আমার ছেলে হয়তো আর বেঁচে নেই। মনতো মানে না। আজও আমরা বুড়া-বুড়ি সন্তানের ফেরার আশায় পথের দিকে তাকিয়ে আছি।
Leave a Reply