বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ শ্রমিকদের ফেরত না পাঠাতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী একথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের জন্য সরকার দূতাবাসগুলোর সাথে যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখছে যাতে তারা পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে আবার কাজ ফিরতে পারেন। তারপরও যদি কাউকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হয় তাদের জন্য ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করছে সরকার।
সরকার প্রধান জানান, প্রবাসীদের জন্য ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠন করা হয়েছে ওয়েজ আর্নাস কল্যান বোর্ডের মাধ্যমে। পুনর্বাসনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ‘শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনায় মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা ৩ লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই অন্তর্বর্তী সময়ে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ করেছি।
তিনি বলেন, বিমান চলাচলের অনুমতির বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং কুটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আমি কতিপয় রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধানের নিকট এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করেছি। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের সরকারের গৃহীত খাদ্য ও চিকিৎসা কূটনীতির আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং ওষুধ পাঠানো হয়েছে।
সরকার প্রধান আরও বলেন, আমাদের প্রতিবেশি অন্যান্য দেশসমূহে যেখানে প্রায় লক্ষাধিক প্রবাসী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, সেখানে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত সময়োচিত কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে ফিরে আসা প্রবাসীর সংখ্যা এখনও কম রয়েছে। আমাদের সরকার ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের টেকসই পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রবাসীদের যথাযথ সহায়তা প্রদানের জন্য একটি ডাটাবেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া যারা পুনরায় বিদেশে যেতে সক্ষম তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রবাসীদের বিদেশে চাকরি ধরে রাখা, নতুন নতুন প্রফেশনে যোগদান, কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ এবং এন্টারপ্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি ফান্ড’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এই ফান্ডটি হবে ‘ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড’ ও ‘ক্লাইমেট রেসিলেন্স ফান্ড’ এর অনুরূপ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে গমনাগমনের সুবিধার্থে আমরা ইতোমধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া এবং এমিরেটসকে বাংলাদেশে নিয়মিত বিমান চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছি। তাছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমান চালু করা হয়েছে।
করোনা চলাকালীন সময়ে পাসপোর্ট অধিদফতরে প্রাপ্ত দুই লাখ ১৫ হাজার আবেদনের অধিকাংশ পাসপোর্ট মুদ্রণ করে বিদেশস্থ বিভিন্ন মিশনে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট না থাকার কারণে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য যে সকল পাসপোর্ট মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে, তা দ্রুত মুদ্রণ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বিতরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
Leave a Reply