সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে বহুল আলোচিত সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কাউন্সিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। রবিবার (১৫ নভেম্বর) দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এতে সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছেন কওমি অঙ্গনের ৪০০ শীর্ষ নেতা। কাউন্সিলে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) অনুসারীদের কাউকে দেখা যায়নি। নতুন কমিটিতেও আহমদ শফী অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি। এতে নবগঠিত কমিটি নিয়ে শুরুতেই হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
সারা দেশ থেকে কওমি অঙ্গনের ৪০০ শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে মুরুব্বিরা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে। হেফাজতের এ সম্মেলনে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে ১২২ জনের নাম ঘোষণা করা হলেও বাকি ২৯ জনের পদ খালি রাখা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলেম বাদ পড়ে থাকলে তাদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে এ পদগুলো পূরণ করা হবে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।
নতুন কমিটিতে অন্যান্যদের মধ্যে মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী সাংগঠনিক সম্পাদক, মাওলানা মামুনুল হক যুগ্ন মহাসচিব, মুফতি ইজহারের বড় ছেলে মুফতি হারুন ইজহার শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্বের কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন হেফাজতের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি এবং হেফাজত আমির আল্লামা শফির ছোট ছেলে ও হেফাজতের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানি সহ আল্লামা শফির অনুসারী অনেক নেতা। অভিযোগ রয়েছে, সম্মেলনে এদের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি (রহ.) চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকে হেফাজতের আমিরের পদটি শূন্য রয়েছে। আল্লামা শফির মৃত্যুর ৫৯ দিন পর হেফাজত প্রতিষ্ঠার ৮ বছরের মাথায় এসে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলো।
রবিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৩৯৪ জন উপস্থিত কাউন্সিলর-সদস্যের মতামত গ্রহণ করা হয়। প্রথমে অধিবেশনে হেফাজতের পূর্বের কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করেন বর্তমান হেফাজত নবনির্বাচিত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। উক্ত সভায় ১২ বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ কমিটি শিক্ষা ভবনের তৃতীয় তলায় সকল সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে রবিবার বেলা আড়াইটায় হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করে।
বেলা ২টার দিকে মিডিয়ার সম্মুখে ১২ বিশিষ্ট সাব কমিটির পক্ষে হেফাজতের নতুন ১৫১ সদস্য বিশষ্ট ঘোষণা করেন বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। এতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। উক্ত কমিটিতে আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান করে ২৪ বিশিষ্ট উপদেষ্টা, ৩২ জন নায়েবে আমির, যুগ্ন মহাসচিব সাতজন, সহকারী মহাসচিব ১৮ জন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ১০ জন সহ মোট ১৫১ বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
তবে ১৫১ জনের পূর্ণ কমিটিতে ১২২ জনকে নেওয়া হলেও ২৯ জনের সদস্যপদ খালি রয়েছে। নবনির্বাচিত আমির বাবুনগরীর পরামর্শে যাচাই-বাচাই করে বাকি সদস্যপদ পূরণ করা হবে বলেও সেখানে ঘোষণা দেন।
এদিকে গতকাল রাত দেশে সারা বাংলাদেশের সদস্যরা হাটহাজারী মাদরাসায় উপস্থিত হতে শুরু করেছিলেন। হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুর পর পদ শূন্য হওয়ায় হেফাজত কিছুটা ভাটায় পড়েছিল। সাবেক মহাসচিবের ব্যাপক ভূমিকায় দীর্ঘ ৮ বছর পরে এ প্রতিনিধি সম্মেলনে আমিরসহ ১৫১ সদস্যের কমিটি নির্বাচন করে কাউন্সিলররা।
এর পরেই নবনির্বাচিত আমির ও মহাসচিব সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মহাসচিবের বক্তব্যে সরকারের প্রতি প্রধান দাবি জানিয়েছেন, কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করতে হবে। হেফাজতের নবনির্বাচিত কমিটির প্রধান কর্মসূচি থাকবে কাদিয়ানিকে কাফের ঘোষণা করা- এমনই বক্তব্য রাখেন মহাসচিব কাসেমী।
প্রয়াত আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তাঁর অনুসারীদের কাউকেই সম্মেলনে দেখা যায়নি। আল্লামা শফীর অনুসারীদের অভিযোগ, তাদের কাউকেই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী মারা যান। এরপর থেকেই আমির নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। গতকাল শনিবার ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাহ আহমদ শফীর অনুসারী একটি অংশ। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রয়াত আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন। আর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। আজ তাঁদের কাউকেই সম্মেলনস্থলে দেখা যায়নি। এর মধ্যেই এ সম্মেলনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে সম্মেলন প্রত্যাখান করেছেন হেফাজতের সাবেক যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি।
জানা যায়, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কওমি আকিদাপন্থী অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। যদিও-বা পরে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। হটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার প্রয়াত মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আমির ও মাদরাসার তৎকালীন সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করে হেফাজতের ২২৯ সদস্যের মজলিশে শুরা কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই সময়।
ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে।
এদিকে হেফাজতের কাউন্সিলকে ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা পুলিশের সদস্য, বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্য ও র্যাবের সদস্যদের ব্যাপকব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তবে কাউন্সিল নিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সম্মেলনকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় মাদরাসা এলাকায়।
হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, হেফাজত ইসলামের সম্মেলনকে ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এ জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Leave a Reply