মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় একই পরিবারের ৩ জনের হাতবাধা অবস্থায় ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়নের ধানীসাফা গ্রামের একটি ঘর থেকে একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও শিশু সন্তানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়নের ধানীসাফা গ্রামের মৃত রতন হাওলাদারের ছেলে অটোচালক আয়নাল হক হাওলাদার (৩৫), আয়নাল হকের স্ত্রী খুকুমনি বেগম (২৫) ও তাদের তিন বছরের শিশু সন্তান আসফিয়া ইসলাম।
পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহত অটোচালক আয়নাল হকের আপন বড় ভাই হেলাল হাওলাদার (৮০), প্রতিবেশী চাচা মালেক হাওলাদার (৫২), চাচাত ভাই বেল্লাল হাওলাদার (৪৫) ও একই গ্রামের মাহবুব হাওলাদার কে (১৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের অটোচালক মো: আয়নাল হক হাওলাদার ধানীসাফা বাজারের নিকটে সড়কের পাশে গত পাঁচ মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী খুকু মণি ও তাদের তিনবছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আসফিয়াকে নিয়ে বসবাস করতেন।
৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার দিনভর আয়নাল অটোচালিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। রাতের খাবার শেষে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্ত ঘরের মেঝে সিঁদ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে।
এরপর দুর্বৃত্তরা পরিবারের গৃহকর্তা, তার স্ত্রী ও একমাত্র শিশু মেয়ে শ্বাস রধ করে হত্যা করে। পরে লাশের হাত পা বেঁধে ঘরের আড়ার সাথে লাশ ঝুলিয়ে রেখে ঘরের মালামাল তছনছ করে পালিয়ে যায়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চাচাত বোন মহিমা খাতুন (১৫) ওই বাড়িতে যায়। এসময় সে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরোজায় ধাক্কা দিলে দরোজা খুলে যায়। এরপর তিন জনের লাশ ঝুলতে দেখে সে চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন । পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পিরোজপুরে মর্গে পাঠায়।
নিহত আয়নালের বড় বোন দুলীয়া বেগম (৩৮) বলেন, আমার ভাইয়ের তেমন কোনো শত্রু ছিল না। তবে আট বছর আগে চাচা মালেক হাওলাদারের কাছ থেকে পাঁচ কাঠা জমি ক্রয় করলেও জমিতে দখল পাননি আমার ভাই। এ নিয়ে তার সাথে বিরোধ ছিলো। আমার ভাইয়ের পুরো পরিবারটিকে এভাবে কারা হত্যা করলো? আপনেরা বিচার করেন।
নিহত আয়নালের স্ত্রীর চাচা আব্দুল মান্নান (৪০) জানান, আয়নালের পরিবার ভাড়া বাসায় থাকতো। বাসাটি তেমন নিরাপদ ছিলো না বলে তাদেরও কিছু স্বর্ণালংকার বাসার মালিক মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী হাওয়া বেগমের কাছে নিরাপত্তার জন্য গচ্ছিত রাখা ছিলো। ঈদ উপলক্ষে ওই স্বর্ণালংকার গত বুধবার বাসায় নিয়ে আসে। এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে।
মঠবাড়িয়া অফিসার ইনচার্জ মো: মাসুদুজ্জামান মিলু বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একই পরিবারের তিনজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি কোনো আত্মহত্যার ঘটনা নয়। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে চারটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে খবর পেয়ে পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহনেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এঘটনার কারণ বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে চারটি বিশেষ তদন্তদল কাজ শুরু করেছে।
Leave a Reply