সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মধ্য কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।এ বিদ্যালয়ের ভবনগুলো এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে সব সময় দুর্ঘটনা ঘটার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরাও। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিনদিন হারাতে বসেছে বিদ্যালয়টি। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে নির্মিত এ বিদ্যালয় ভবনে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে শ্রেণি কক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। বৃষ্টির সময়ে ছাদ বেয়ে পানি পড়ছে মেঝেতে, খসে পড়েছে পিলারের ইট বালি। অনেক কক্ষের দরজা জানালা নেই। ফলে সব সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় থাকেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বিদ্যালয়টি। অথচ এখানে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থীর। কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ চারটি কক্ষে দুই সেশনে চলছে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস। শ্রেণি কক্ষের মধ্যেই রয়েছে অফিস ও লাইব্রেরি কক্ষ। ভবন না থাকায় স্যাঁতস্যাঁতে এই বিদ্যালয়টিতে দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাকিব জানান, বৃষ্টির সময় ছাঁদ থেকে পানি পড়ে বই খাতা ভিজে যায়। ক্লাসের মেঝেতে পানি জমে থাকে। তাছাড়া প্রায়ই পলেস্তারা খসে বেঞ্চে পড়ে থাকে। তাই স্কুলে আসতে ভয় করে। একই কথা জানালেন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নয়নসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিমা আক্তার জানান, শ্রেণি কক্ষের স্বল্পতার কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ ভবনে পাঠদান চলে। যে কারণে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির জন্য পৃথক ক্লাসরুম থাকার বিধান থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এছাড়া গত আগস্ট মাসের শুরুতে মৌসুমি জোয়ারের পানিতে শ্রেণি কক্ষগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ভয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে চায় না।
এ ব্যাপারে মধ্য কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে । যে কারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। জরুরী সংস্কার করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিশুরা আরও স্কুল বিমুখ হবে এবং বাড়তেই থাকবে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গত অর্থ বছরে স্লিপ প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা থেকে কিছু কাজ করানো হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সংস্কার বরাদ্দ জুরুরি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মধ্য কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুজাম্মেল হোসেন জানান, সংস্কার না করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পলেস্তারা খসে পড়ে যে কোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয় একাধিক বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। এ বিদ্যালয়ের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নলছিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোজাম্মেল এ ব্যাপারে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ওই বিদ্যালয় ভবনের মেরামতের জন্য আগামী অর্থ বছরে সংস্কার বরাদ্দের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করি বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply