সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামে একটি পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে চারজনই জন্মান্ধ। অভাব অনটনের মধ্যে চলছে তাদের জীবন। প্রতিবন্ধী ভাতা ও অন্যের সহযোগিতায় চলে তাদের সংসার। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন একটি পানের বরজ। যেটি সম্প্রতি ভেঙে ফেলেছে ভূমিদস্যুরা। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই একমাত্র বসতঘরটিও দখল নিতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। ভূমিদস্যুদের হাত থেকে সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বিধবা জন্মান্ধ শান্তিরানী দাসের একমাত্র ছেলে জন্মগতভাবেই অন্ধ বলরাম চন্দ্র দাস। বলরাম চন্দ্রের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ছেলে সৌরভ দাস ও মেয়ে দীপা দাসও জন্মান্ধ। ওই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে চারজনই জন্মান্ধ। অন্ধ পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অন্ধ বলরাম চন্দ্র দাস। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়েই চলে তার সংসার। ১৯৭৩ সালে সরকার ওই অন্ধ পরিবারের বলরাম চন্দ্র দাসের নামে ৬২ শতাংশ ভিপি সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয়। ওই জমিতে বলরাম চন্দ্র বসতঘর তোলেন এবং পানের বরজের টাকা দিয়ে সংসার চালান।
এই বন্দোবস্ত জমি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীল তার বাবার সম্পত্তি দাবি করে তাদের উচ্ছেদের জন্য পাঁয়তারা করছেন। গত তিন মাস আগে ওই জমিতে দেওয়া বলরামের পানের বরজ ভূমিদস্যু শিবু ও তার লোকজন ভেঙে ফেলে। বর্তমানে ওই অন্ধ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ভূমিদস্যুরা। এ দিকে শিবু মেম্বার অন্ধ বলরাম ও তার স্ত্রী সন্ধ্যারানীকে আসামি করে থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। জন্মান্ধ বলরাম দাসের পরিবারের সদস্যরা শিবু ও তার লোকজনের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না বলে জানায় জন্মান্ধ পরিবারটি।
ভুক্তভোগী জন্মান্ধ বলরাম দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘দাদা মুই আর কী হরমু। মোর সংসারে ছয়জন মানু , হেইয়্যার মধ্যে চারইজনই অন্ধ। মুই অন্ধ, মোর মায় অন্ধ, হ্যারপর মাইয়্যা ও পোলাডাও অন্ধ। দাদা আমনেরাই কন মোরে সরকার এক খণ্ড জমি দেছে, হেই জমিতে মুই ঘর বানাইছি ও পানের বর দিছি। হেই জমি শিবু মেম্বার ও তার লোকজন দহল হরতে চায়। মোগো হয়রানি করতে মোগো নামে কোর্টে দুইডা মামলা দেছে। প্রত্যেক দিন মোরে ডর দ্যাহায়। মোর পানের বরজ সন্ত্রাসী দিয়া ভাইঙা হালাইছে। শিবু ও হ্যার সন্ত্রাসীদের ভয়ে মোরা ঘরে গোনে বাইরাইতে পারি না।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিবার ও সরকারের দেওয়া বন্দোবস্ত জমি রক্ষা ও শিবু মেম্বারের দেওয়া মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচার দাবি জানান। বলরাম দাসের স্ত্রী সন্ধ্যারানী দাশ বলেন, ‘স্যার, মুই আর পারছি না। পরিবারের চারজন অন্ধ নিয়ে খুব কষ্টে আছি। প্রতিবন্ধী ভাতা ও মানুষের দেওয়া সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চলে মোগো সংসার। কিন্তু শিবু মেম্বার ও তার লোকজন মোর এই অন্ধ পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য উইঠ্যা পইড়্যা লাগছে। শিবু মেম্বারের হয়রানি ও ভয়ভীতি থেকে রক্ষার জন্য সরকারের ওপড়ের বড় মানুষের কাছে দাবি জানাই।’ স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য শীবু চন্দ্র শীল এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু। সে দীর্ঘদিন ধরে জন্মান্ধ বলরাম দাসের বসতবাড়ি দখলের পাঁয়তারা করছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীলের মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল বাশার জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, ওই অন্ধ পরিবারটির সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায়ভাবে কেউ তাদের হয়রানি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply