বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতি ১০ মিনিট পর পরই হাসপাতালের ভীড় করছে রোগীরা। সিট কিংবা আইসিইউ খালি নেই হাসপাতালে। ভাড়ায় মিলছে না অ্যাম্বুলেন্সও। আগে থেকে রোগীরা বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আবার অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্স কোনো মতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই সুযোগে প্রাইভেট হাসপাতালে আইসিইউর নামে প্রতারনা চলছে। ইচ্ছে মত বিল করার অভিযোগ রয়েছে। অন্য দিকে সরকারী হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বেড খালি নাই। আবার হাসপাতালের দালালরা টাকার বিনিময়ে রোগী ভর্তি ও সিটের ব্যবস্হা দেন বলে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা বিস্তার রোধে হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ বাড়ালে হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।না হলে আক্রন্ত কিংবা মৃত্যুর সংখ্যা কমবে না। বরং বাড়বে। তাই সচেতনতা জরুরি।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, করোনা হাসপাতাল নির্মান করার কথা ভাবছে সরকার। আর সেই হাসপাতাল নির্মান করা হলে মানুষের দুর্ভোগ থাকবে না।
আইসিইউ সিটের জন্য ছুটছে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। বরিশাল থেকে করোনার চিকিৎসা করাতে এসেছে মনোয়ার হোসেন। তিনি উজিরপুরে বামরাইলে ব্যবসা করেন। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মুগদা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
চিকিৎসা করাতে না পেরে সর্বশেষ অ্যাম্বুলেন্স তার মৃত্যু হয়েছে। মুগদা হাসপাতাল কিংবা ঢাকা মেডিক্যাল কোথাও সিট খালি নাই। মনোয়ার হোসেন ছোট ছেলে রাকিব হোসেন বলেন, চেষ্টা করিয়ে আইসিইউ সিট খালি পাইনি। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। সিট মিলাতে পারি নাই। আমার বাবাকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাতে পারলাম না। সরকারে উচিত জরুরি হাসপাতালে সিট সংখ্যা বাড়ানো। না হলে শুধু আমার বাবা নয়, এই ভাবে আরো কত মানুষ মরবে। খোজ নিয়ে জানা গেছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, মুগদা হাসপাতাল আইসিইউ কিংবা সিট মিলাতে না পেরে অনেকেই ভর্তি হচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতালে। এই সুযোগে ইচ্ছে মত বিল করার অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে বিরুদ্ধে।
আইসিইউর নামে প্রতারনা: শুক্রবার মেরাদিয়া ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬০ বছরের বৃদ্ধ হুমাউন কবিরের। তার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম গ্রামে। গত ১০ দিন ধরেই ভর্তি এই হাসপাতালে। বিল করেছে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। দারিদ্র পরিবারের হলেও বিল পরিশোষ করেই লাশ নিতে হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য খালিদ জামান বলেন, আইসিইউ, আসলে এটা নামে আইসিইউ, কাজের কাজ কিছু নেই। এখানে ঠিক মত এসি চলে না। তার পরে তারা ইচ্ছে মত বিল করেছে।
হাসপাতালে সিট নেই, বাসায় চিকিৎসা: বনশ্রী ডি ব্লকে এক পরিবারের ৮ জন গত ৫ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে সিট না পেয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর পরিবারের অন্য সদস্য ওই বাড়ি ছেড়ে বি ব্লকের এক আত্ময়ীর বাড়ির বসবাস করছেন। তারা প্রতিদিন তিন বেলা খাবার বাসার নিচে একটি নির্ধারিত স্থানে রেখে যান। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ রেখে যাচ্ছেন। তবে খুব বেশি অসুবিধা বোধ করলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। তাই সিট কিংবা আইসিইউ কোনোটাই খালি নেই। সিটের সংখ্যা না বাড়ানো পর্যন্ত এই ভাবে চালাতে হবে মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা রোগীদের বেড সংখ্যা ১৮০টি। রোগী ভর্তি আছে ১৮৫ জন।
আইসিইউ বেড ২০টি। সব গুলোতেই রোগী আছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ভিআইপিদের জন্য একটি খালি রাখা আছে। দেশে সরকারি হাসপাতাল ৬৫৪টি। এরমধ্যে মেডিক্যাল কলেজ ও স্পেশালাইজড হাসপাতাল ১৪০টি, আর ৫১৪টি উপজেলার হাসপাতালে বেড সংখ্যা ৫১ হাজার ৩১৬টি। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে বেড ১৬৯টি। রোগী ভর্তি ১৫৮ জন। আইসিইউ বেড ১৬টি। সব গুলোতেই রোগী ভর্তি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বেড ২৭৫টি। রোগী ভর্তি ৪১১ জন। আইসিইউ ১০টি। সব গুলোতেই রোগী। মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে বেড ১৪০টি। রোগী ১৩৫ জন। আইসিইউ ১৬টি। ১৪টিতে রোগী ভর্তি। ভিআইপিদের জন্য রাখা হয়েছে দুইটি সিট। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড ৩১০টি। রোগী ৩১০টি। আইসিইউ ১৯টি। রোগী ভর্তি ১৮ জন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে বেড ৪৮৫টি। রোগী ভর্তি ৩১৫ জন। আইসিইউ ১৫টি। রোগী ভর্তি ১০ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৮৩টি বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি ৭২০টিতে। আইসিইউ বেড ২০টি। সব গুলোতেই রোগী। এভাবে রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে প্রায় দিন হাজারেরও বেশি। আর প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ভর্তি ৪ হাজার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শুক্রবার পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু ৯ হাজার ৫৮৪ জনের। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬২ জন। সবমিলিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫১১ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪১ জন।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই সিট ও আইসিইউর সংকট। আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনা নেই। তাই প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে সিট কিংবা আইসিইউ খালি নেই। এই ভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে।
Leave a Reply