রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ একটু ভালো থাকার স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান বাবুল হাওলাদার। কিন্তু বিধিবাম। সেখানে যাওয়ার পর একটি দুর্ঘটনায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সব স্বপ্ন। চলে আসতে হয় দেশে। এখন খেয়ে না খেয়েই কাটছে বাবুল ও তার পরিবারের লোকজনের দিন।
বাবুলের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরের পুটিয়াখালি গ্রামে। তার বাবার নাম সাহেব আলী। চার ভাই-বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে ছয়জনের সংসার। তবে এখন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী দিনমজুর বাবা।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বাবুল হাওলাদার। এরপর সংসারে জোগান দিকে টেম্পু চালকের পেশা বেছে নেন। এতে বাবা-ছেলের আয়ে দিন একটু ভালোই কাটছিল। বাবা-মা, ভাই-বোনের মুখে আরেকটু হাসি ফোটাতে জমি-গাছপালা বিক্রি করে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে একটি দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান বাবুল। ফিরে আসতে হয়েছে বাবার সেই ঝুপড়ি ঘরের বিছানায়। এখানেই ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে তার। নিজের কথা বলতে গিয়ে দুই চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে কষ্টের অশ্রু।
বাবুলের বাবা দিনমজুর সাহেব আলী বলেন, ২০০৮ সালে একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাই চান মিয়ার মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচে বাবুলকে পাঠানো হয়। তখন আমার ৪৫ শতাংশের বাড়িভিটা ও ৩০ শতাংশের কৃষি জমি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এছাড়া গাছ বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা ও বাবুলের টেম্পু চালিয়ে জমানো টাকা মিলিয়ে দুই লাখ টাকা চান মিয়াকে দেই। দেড় লাখ টাকা বাকি রেখে ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পাঠাই।
বাবুল হাওলাদার বলেন, প্রায় পাঁচ বছর সুস্থ থেকেই মালয়েশিয়ায় কাজ করি। ওই পাঁচ বছরে ভিসার বকেয়া, গ্রামের কিছু লোকের ঋণ পরিশোধ করি। কিছু টাকা জমাও করি।
২০১৩ সালের শুরুতে একটি পরিচিত শ্রমিক দলের সঙ্গে একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজে যান বাবুল। সেখানে পাইলিংয়ের ওপরের বাড়তি অংশ গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে কাটছিলেন। পাইলিংয়ের গোড়ায় কিছুটা খনন করা গর্তের ভেতরে দাঁড়িয়ে কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় কাটা বাড়তি অংশ তার মাথায় পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। হাত থেকে নিচে পড়ে যায় গ্যাস সিলিন্ডারের হাতল। সেই হাতলের ওপর বসে পড়লেই আগুনে প্যান্ট পুড়ে যায়। এতে কোমরের নিচ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পুড়ে যায়। এমনকি গোপনাঙ্গটিও পুড়ে যায়।
গর্ত থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখে অন্য সহকর্মীরা বাবুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। প্রথমে জহুর বারু হাসপাতালে প্রায় এক বছর চিকিৎসা নেন তিনি। ওই হাসপাতালের খরচ প্রায় ৭০ হাজার রিংগিত নির্মাণাধীন ভবনের মালিক পরিশোধ করেন। এরপর আরো দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। সে খরচ নিজের জমানো টাকা এবং পরিচিত বন্ধুরা দেন।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে এসে ঢাকা হাসপাতালেও ৬-৭ মাস চিকিৎসা নেন বাবুল। সেখান থেকে বাড়িতে আসেন। বর্তমানে তিনি বাইপাস পাইপের মাধ্যমে পায়খানা ও প্রস্রাব করছেন। মৃত্যু পর্যন্তই তাকে শুয়ে কাটাতে হবে। তবে হুইলচেয়ারে কেউ বসিয়ে দিলে বসতে পারেন।
বাবুলের বাবার বয়স বাড়ায় কেউ কাজেও নিতে চান না। ছোট ভাই ফোরকান দিনমজুরের কাজ করে মা-বাবা আর অসুস্থ ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
ইউপি সদস্য মো. ফারুক মোল্লা বলেন, বাবুলকে এক বছর আগে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। সামনে নির্বাচন থাকায় পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তাই বর্তমানে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করা সম্ভব নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করার সক্ষমতা আমাদের নেই। তবে সমাজসেবা অফিস থেকে ঋণ নিতে চাইলে সহযোগিতা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি সরকারের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন। বাবুলকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তার বিকাশ নম্বরে ০১৭৫৩৬২৩৭৭০ করতে পারেন।
Leave a Reply