বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ জাল কাগজপত্র দিয়ে নতুন রেজিস্ট্রেশন করে চোরাই গাড়ি রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক।
উচ্চাদালতে জামিন শেষে সোমবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পনের পর বিচারক মো. মহিসন উল হক তাকে কারাগারে পাঠান। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আইয়ুব আনসারীর আইনজীবী মোখলেচুর রহমান বাচ্চু।
অভিযুক্ত আইয়ুব আনসারী বরিশাল নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া সাধুর বটতলা এলাকার মৃত আতাহার আলী হাওলাদরের ছেলে। আনসারী বর্তমানে ঢাকা বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালকের (ইঞ্জিঃ) অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ মাদারীপুর জেলার মশিউর রহমান ঠাকুরের ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৩৫০) গাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানা এলাকা থেকে চুরি হয়। এ ঘটনায় একই দিন গাড়ির চালক শাহজাদা শিকদার শিবালয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে গাড়ির মালিক মশিউর রহমান ঠাকুর জানতে পারেন একই চেসিস নম্বরে ১টি মাইক্রোবাস বরিশাল বিআরটিএ অফিসের মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রেশন (বরিশাল ছ-১১-০০৩৯ নম্বর) ব্যবহার করে রাস্তায় চলাচল করছে।
এ ঘটনায় মশিউর রহমান ঠাকুর বরিশাল ও ঢাকা বিআরটিএ অফিসকে অবগত করেন। এতে বরিশাল বিআরটিএ অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেন। ফলে মশিউর রহমান ঠাকুর বরিশাল বিআরটিএ অফিসে গাড়িটি ফেরত পেতে আবেদন করেন। অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে চট্রগ্রাম কাস্টম হাউজে পাঠান। কাস্টম হাউজের সহকারি কমিশনার কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে কোনো মিল না থাকায় তা বরিশাল বিআরটিএ অফিসকে অবগত করেন।
এর আগে রূপ কুমার বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি বরিশাল নগরীর নতুন বাজার এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ওই চোরাই মাইক্রোবাসটির মালিক হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বিআরটিএ অফিসে আবেদন করেন।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর সহকারি পরিচালক তার অধীনস্ত মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে কাগজপত্র যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলেন। কিন্তু আইয়ুব আনসারী নিজ স্বাক্ষরে গ্রাহক রূপ কুমার বিশ্বাসের দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক ও ত্রুটিমুক্ত উল্লেখ করে সনদ প্রদান করেন।
তার সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালীন সহকারি পরিচালক নূরুজ্জামান চোরাই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেন। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় বরিশাল বিআরটিএ এর তৎকালীন সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এমডি শাহ আলম রেজিস্ট্রেশন গ্রহণকারী রূপ কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে একই ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল কোতোয়ালি মডেল থানায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক এনায়েত হোসেন ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারী ও রূপ কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।
দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারি পরিচালক ওমর ফারুক মামলার নথি, ঘটনাস্থল, জব্দ করা আলামত এবং বরিশাল অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে জানতে পারেন, রূপ কুমার বিশ্বাস একজন সামান্য পল্লী চিকিৎসক। তার গাড়ি কেনার কোনো আর্থিক সামর্থ্য নেই।
মূলত জাল জালিয়াতির মাধ্যমে গাড়ি চোর/ছিনতাইকারীদের সাথে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধ লাভবান হতে অসম্পূর্ণ কাগজপত্রের মাধ্যমে নিরপরাধ রূপ কুমার বিশ্বাসের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে ইতিপূর্বে ঢাকা বিআরটিএ থেকে চোরাই গাড়িটির ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৩১৫০ নম্বরে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। পরবর্তীতে ২য় বার একই নাম ও বরিশাল নতুন বাজারের ঠিকানা ব্যবহার করে বরিশাল বিআরটিএ থেকে বরিশাল ছ-১১-০০৩৯ নম্বরে রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিআরটিএ এর নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্রের সাথে গ্রাহকের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র না নিয়ে ভূয়া ও জাল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চোর/ছিনতাইকারীদের সাথে যোগসাজশে অবৈধ লাভবান হতে ও মূল অপরাধীকে আড়াল করার অপরাধে তৎকালীন মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট জমা দেন।
একই সাথে তিনি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রূপ কুমার বিশ্বাসকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেন।
Leave a Reply