সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ হেফাজতে ইসলামের আমির আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর থেকেই আলোচনা, সমালোচনা আর বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। সাম্প্রদায়িক সংগঠনটির কর্তৃত্ব নিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি অংশের নেতা তোড়জোর শুরু করেছে। শফীপন্থিদের বাদ দিয়ে হেফাজতকে পুরোপুরি দখলে নিয়ে সরকারবিরোধীদের কাজে লাগাতে তৎপরতা দেখা গেছে শুরু থেকেই। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কাউন্সিলের আগেই কৌশলে হেফাজতে ইসলামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায় জামায়াত-শিবির। আহমদ শফী জীবিত থাকতে সংগঠনটি চট্টগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রিত হলেও চিত্র এখন পাল্টে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংগঠনটিকে কব্জা করতে বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠরা এটি ঢাকাকেন্দ্রিক করার চেষ্টা জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর একদল অনুসারীও একই দাবি তুলেছেন। তারা বলছেন, সংগঠনটির নেতৃত্বে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকদের আনতে তোড়জোর চলছে। এমনকি শফী সমর্থকদের বাদ দিয়ে হেফাজতকে পুরোপুরি দখলে নিয়ে সরকার বিরোধীদের কাজে লাগাতে তৎপর তারা। আর এমন দাবি করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই।
তারই অংশ হিসেবে রোববার অনুষ্ঠিতব্য হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে হেফাজতে ইসলামের একাংশ। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সেই সংবাদ সম্মেলনে বক্তাদের মুখেও এমন কথা শোনা গেছে। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আহমদ শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় সদস্য এবং আহমদ শফীর নাতি মাওলানা কায়সার। সম্মেলনে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। কারণ হিসেবে সম্মেলন থেকে জানানো হয়, ‘হত্যার হুমকি’ পেয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল না করার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে আহমদ শফীর মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ আখ্যায়িত করে তার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়।
শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর রোববার হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। হেফাজত মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারীদের তৎপরতায় অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পাননি বলে শফীপন্থিদের অভিযোগ।
শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে হুজুরের হাতে গড়া অরাজনৈতিক কওমী সংগঠনকে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবির, বিএনপির হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
আহমদ শফীর পরিবারের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হযরতের হত্যার বিচারের পূর্বে কোনো কাউন্সিল না করার জন্য হেফাজতে ইসলামের সকল দায়িত্বশীলদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর সুপরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আল্লামা শফীকে মাদ্রাসায় হত্যা করেছে। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কারণে তার এ পরিণতি হয়েছে।’
মঈন উদ্দীন বলেন, ‘শফী হুজুরকে হত্যার উদ্দেশে ও হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য জামায়াত-শিবির ১৯৮৫ সালে হামলা চালায়। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ হামলা রুখে দিয়েছিলেন শফী হুজুর।’
শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানের বিষয় উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে পা না দেয়ার কারণে শফী হুজুরকে তখন থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গেল ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কিছু ছাত্রকে উসকে দিয়ে জামায়াত-শিবিরের লেলিয়ে দেয়া ক্যাডার বাহিনী মাদ্রাসা অবরুদ্ধ রাখে। এসময় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়ে মীর ইদ্রিছ, নাছির উদ্দিন মুনীর, মুফতি হারুন ও ইনজামুল হাসানদের দিয়ে সেখানে লুটতরাজ ও ভাঙচুর চালায়। ওই সময় হুজুরের কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও হুজুরকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে শফী হুজুরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এতে হুজুর অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে অক্সিজেন দেয়া হয়। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিলে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। পরে অ্যাম্বুলেন্স আনা হলেও তারা ঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়তে দেয়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘এটা দিনের মতো পরিষ্কার, জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই কাউন্সিল। তাদের চলাফেরা দেখেই এটা প্রতীয়মান। কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আজ যারা কাউন্সিল করছে তাদের কারও কারও ছবি দেখা গেছে তাদের (জামায়াত) সাথে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনুরোধ করছি, আপনারা মূলধারায় ফিরে আসেন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ১৫ নভেম্বরের পর সিনিয়রদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।’
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আল্লামা শফী। পরদিন তাকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পাশে দাফন করা হয়।
১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন।
Leave a Reply