বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
-প্রভাষক আমিনুর রহমান শামীম।। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এ কিছু শর্তারোপ করায় বিপাকে পরে এমপিও ভুক্ত বেসরকারি কলেজের প্রভাষকগণ। এই নীতিমালা অনুসারে কোনো প্রভাষক ৫ঃ২ অনুপাত প্রথার কারণে যত মেধাবী ও দক্ষই হোননা কেন সহজে সহকারি অধ্যাপক হতে পারবেন না। সারা জীবনে অধ্যক্ষ কিংবা উপাধ্যক্ষ হতে পারবেন না। অধিকাংশ শিক্ষককেই প্রভাষক পদবী নিয়েই অবসরে চলে যাবেন।
শিক্ষক সংগঠন গুলোর দাবি, অনুপাত প্রথা তুলে দিয়ে ১৬ বছর চাকুরীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত পদোন্নতি দেয়া হলে এবং তাদের অধ্যক্ষ পদে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হলে তবে মেধাবী শিক্ষক দ্বারা মেধাবী অধ্যক্ষ ও বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।
চাকুরীর ক্ষেত্রে পদোন্নতি একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কর্মস্পৃহা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা মুল্যায়নে পদোন্নতি ব্যবস্থার উপর সরকারের গুরুত্ব দেয়া সময়ের দাবি। অনুপাত প্রথার অনুপাত বাড়ালেও কলেজভিত্তিক পদোন্নতি ক্ষেত্রে সঠিক যোগ্যতা ও দক্ষতার মুল্যায়ন হবে না বলে দাবি প্রবীণ প্রভাষকদের।
গত ১২ জুন,২০১৯ এর জারিকৃত ২০১৮ এমপিও নীতিমালার সংস্কারের ক্ষেত্রে শিক্ষক নেতারা মনে করেন, ১৬ বছর ও তার উর্ধ্ব সময় কাল যে সকল প্রভাষকগন চাকুরি করে আসছেন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হয়ে বরং অনুপাত প্রথার সংস্কারের কারণে অনেক সদ্য এমপিওভুক্ত নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ১০ বছরে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। সে ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির স্বচ্ছতা ও প্রবীণ শিক্ষকদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে ধারাবাহিক ১৬ বছর চাকুরীরত শিক্ষকদের নিয়মিত পদোন্নতি দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।
বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১২ জুন জারিকৃত এমপিওভুক্তির নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে কিছু সুনির্দিষ্ট সংশোধনী আনার কথা রয়েছে ।
গত বছর, জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সমকালের ২ এপ্রিল ২০১৯ এর প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এখন থেকে চাকরির ৬ ও ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাবেন। আগে শিক্ষকরা চাকরির ৮ ও ১৬ বছর পূর্তিতে দুটি টাইমস্কেল পেতেন। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল চালুর সময় টাইমস্কেল উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। এ জন্য এখন চাকরির ১৬ বছরের মধ্যে অন্তত দুটি ধাপে উচ্চতর স্কেল চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি কলেজের পদোন্নতির সোপান তৈরি করতে সহযোগী অধ্যাপকদেরও এমপিওভুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য গত বছরের ১২ জুন জারি করা এমপিওভুক্তির নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতেও প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষকদের এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে বদলি করতে একটি নীতিমালা তৈরির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মাউশিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গত বছর ২৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মো. জাবেদ আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় গত ৩ এপ্রিল ২০১৯ এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির খসড়া নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো মাউশিকে।
অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদ বলেছিলেন, ‘ ১২ জুন জারি করা এমপিওভুক্তির নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে কিছু সুনির্দিষ্ট সংশোধনী আনা হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষকদের পদোন্নতি, এসিআরসহ নানা বিষয়ে সংস্কার ও পরিবর্তন আসবে। আর পরিবর্তনের সব কিছু শিক্ষকদের কথা ভেবেই করা হবে। চাকরির ১৬ বছরে দুটি উচ্চতর গ্রেড শিক্ষকরা পাবেন। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য নীতিমালা করা হচ্ছে। সহযোগী অধ্যাপকদের এমপিওভুক্ত করার বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এ জন্য প্রস্তাব তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে।’
সভায় অংশ নেওয়া মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেছিলেন, ‘আগেই টাইমস্কেল উঠে গেছে। এখন উচ্চতর গ্রেড নামে হোক, আর যে নামেই হোক, শিক্ষকরা চাকরির ১৬ বছরে দুটি সুবিধা পাবেন।’
নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে অধ্যক্ষ ও ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে ৫:২ অনুপাতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ সর্বমোট ১২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন
প্রার্থীরাই আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আবার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হতে হলে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ/ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে ৩ বছরের অভিজ্ঞ প্রার্থীরাই যোগ্য।
এ ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষকদের দাবি, ২০১৮ নীতিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী সংকটে কলেজ শিক্ষায় মারাত্মক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাই বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ বিধি পরিবর্তন একান্ত জরুরী। তাদের মতে একটি কলেজ সার্বিক পরিচালনা ও দেখভাল করার জন্য একজন অধ্যক্ষ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। সেক্ষেত্রে মেধাবী, দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন একজন অধ্যক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১৮ নীতিমালা অনুসারে সে সুযোগটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
-প্রভাষক আমিনুর রহমান শামীম
চাঁদপাশা হাইস্কুল ও কলেজ
বাবুগঞ্জ, বরিশাল।
Leave a Reply