রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন
জেলা প্রতিনিধি॥ নামেই শুধু ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল। ঝালকাঠির এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও পরিবেশ বিষয়ে কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গেলে মনে হবে আপনি তাদের করুণার পাত্র! চিকিৎসকের পদ ২৩টি থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ১০ জন। এই ১০ জনের মধ্যে কর্মস্থলে থাকেন শুধুমাত্র আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. গোলাম ফরহাদ।
রোগীর স্বজনসহ স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ এবং আশপাশের পরিবেশ খুবই নোংরা। রান্না ঘরের আবর্জনা ফেলে করা হয়েছে ময়লার স্তূপ। যা দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার করা হয় না। হাসপাতালের ড্রেনগুলো ময়লায় জ্যাম হয়ে আছে। ড্রেন উপচে ময়লাগুলো বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব স্থান থেকেই হচ্ছে মশার উৎপত্তি। দেখলে মনে হবে হাসপাতাল এলাকা মশার প্রজনন কেন্দ্র।এ দিকে গত বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় এ বিষয়ে ঝালকাঠি পৌর মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদারসহ বক্তরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝালকাঠি আধুনিক সদর হাসপাতালের আশপাশে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা ও পানিতে ডেঙ্গু মশা ঘর বেঁধেছে। দেখে মনে হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন এডিস মশা তৈরির প্রজনন কেন্দ্র। হাসপাতাল চত্বরের চারপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ভেতরের ড্রেনে ডাবের খোসা, ব্যান্ডেজের কাপড় ও ওষুধের অসংখ্য ব্যবহৃত বোতল পড়ে আছে। সেই সঙ্গে পড়ে আছে পলিথিন এবং নানা বর্জ্য। এসব বর্জ্য পানিতে পচে ডেঙ্গু মশাসহ বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভেতরেও। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু আতঙ্কে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এলাকাবাসী।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, নোংরা পরিবেশেই আমাদের চিকিৎসা চলছে। দুর্গন্ধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা যায় না। চিকিৎসার জন্য এসে এসব দেখে এমনিতেই অসুস্থ হয়ে যাই। এসব ময়লা-আবর্জনা দ্রুত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। দ্রুত এসব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করলে এখান থেকে সৃষ্ট ডেঙ্গু মশাসহ অন্যান্য রোগজীবাণু চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
শুধু জনসাধারণই নয়, আশঙ্কায় আছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. গোলাম ফরহাদও। এ বিষয়ে গত ২৬ জুলাই ডা. মো. গোলাম ফরহাদ তার ফেসবুকে জলাবদ্ধতার ছবিসহ এক স্ট্যাটাস দেন। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
স্ট্যাটাস তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ডাক্তার কোয়ার্টার, সরকারি হাসপাতালের কোয়ার্টার এ বসবাসকারী চিকিৎসক একমাত্র আমি ও আমার পরিবার। বৃষ্টি না হলেও আমার বাসার সামনে পানি থাকে পুরো বর্ষাকাল। সিভিল সার্জন অফিস, গণপূর্ত বিভাগ, পৌরসভায় প্রতিকার চেয়েও ফলাফল শূন্য। হাসপাতালের জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। হাসপাতালের কোয়ার্টারে ডাক্তারা থাকেন না এ নিয়ে অনেক পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু যারা থাকেন তারা কিভাবে আছেন এ নিয়ে কোনো খবর বের হয়নি। আর এভাবেই বা কতদিন থাকবেন? এতে এডিস মশার জন্ম হয়ে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। যথাযথ বিবেকবান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হালদার বলেন, ঝালকাঠিতে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার সবকটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু চিহ্নিতকরণ করতে প্রয়োজনীয় কিট সরবারহ করা হয়েছে।
Leave a Reply