বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা, বানারীপাড়া॥ স্বাধীনতা আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপ নয়,রূপকথা কিংবা গল্পগাঁথাও নয় স্বাধীনতা মানে শোষণ-তোষন আর পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে বিশ্বের দরবারে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড।
আর সেই স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে যারা মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে সন্মূখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদেরই একজন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া মডেল ইউনিয়নের পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামের ইসরাইল খান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহবানে তরুন বয়সে দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় তিনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। নিজ এলাকা ছাড়াও বানারীপাড়ার চাখার,হক সাহেবের হাট,সলিয়াবাকপুরের মাদারকাঠি ও ধারালিয়া,বানারীপাড়া থানা এবং উজিরপুর থানা আক্রমন এবং স্বরুপকাঠিসহ বরিশাল ও পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে সন্মূখ যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন।
যুদ্ধকালীন রাজাকাররা তার পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ওই সময় রাজাকারদের গুলিতে তিনি আহত হন। যুদ্ধে আহত হওয়ায় অসুস্থতাজনিত কারন ও গুরুত্ব না বোঝায় স্বাধীনতা অর্জনের পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ সনদ নেননি। ১৯৭৭ সালে রাজাকাররা আহত মুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল খানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ৭১’র পরাজয়ের প্রতিষোধ নেন। তখন তিনি নিজ গ্রামের নব নিবাচিত ইউপি সদস্য ছিলেন।
রাত ৮টার দিকে একটি শালিস বৈঠক থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় তিনি স্ত্রী,৫ বছরের ছেলে শাহাদাৎ ও ১০ মাস বয়সী ছেলে সবুজকে রেখে যান। দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে তার স্ত্রী সাজিদা খান জীবন সংগ্রামে অবর্তীণ হন। তার দু ছেলেই বর্তমানে বেকার। ফলে এ পরিবারটিকে অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। যুদ্ধ শেষ হয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও এ পরিবারের জীবন যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি।
স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য সাজিদা খান বিভিন্ন জনের কাছে ধর্না দিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কোন সুফল পাননি। জীবন সায়হেৃ দাঁড়ানো বিধবা সাজিদা খান স্বামীর মরনোত্তর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চান। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেলে মৃত স্বামীর আত্মা যেমন অতৃপ্ত থাকবে তেমনী তিনিও কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করবেন।
এ জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা ‘মানবতার মা’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ.কম মোজাম্মেল হক সহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালীণ বানারীপাড়া,স্বরূপকাঠি ও উজিরপুর থানার বেজ কমান্ডার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান বলেন মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত ইসরাইল খান,আবুল হোসেন খান,নুরু ও আদম আলীসহ এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক তার সঙ্গে সার্বক্ষনিক থেকে সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ইসরাইল খান ও আবুল হোসেন খানের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ।
তাদের স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান খান বলেন যুদ্ধ না করে আবার কেউ কেউ বিরোধীতা করে এখন স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতি না পেয়ে বেদনাহত হৃদয়ে অনেকে পরপারে চলে গেছেন কেউ কেউ ধুকে ধুকে মরছেন।
Leave a Reply