মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান শোভা রানী মজুমদারকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা ঘটনার দুই মাস পার হলেও আসামিরা কেউ ধরা পড়েনি। হামলাকারিরা শহরের চিহ্নিত মাদক কারবারি ও তার প্রতিবেশী। মাদক ব্যবসায় বাধা দিতে গিয়ে তিনি এ নৃশংস হামলার শিকার হন।
সন্ত্রাসীরা ধরা না পড়ায় হামলার শিকার এ নারী নেত্রী এখন প্রাণ সংশয়ে পৌর শহরের বাসা ছেড়ে এখন গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে অভিযুক্ত আসামিরা ঘটনার পর এলাকা ছাড়া।
জানা গেছে, মঠবাড়িয়া পৌরশহরের দক্ষিণবন্দও মহল্লার বাসিন্দা নারী নেত্রী শোভা রানী মজুমদার এর প্রতিবেশী মাদকসেবী ও মাদক কারবারি ইসমাইল হাওলাদারকে মাদক ব্যবসা বন্ধে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় সন্ত্রাসী ইসমাইল। গত ২ জুলাই রাত ৯টার দিকে শোভা রানী মজুমদারের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় ইসমাইল। সে শোভার গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায় শোভা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ইসমাইল। এ ঘটনায় আহত শোভা রানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ জুলাই ইসমাইল হাওলাদার (২২) ও তার পিতা রত্তন হাওলাদার (৫০) সহ অজ্ঞাত দুইজনের বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
শোভা রানী মজুমদার মঠবাড়িয়া আনসার ভিডিপি এর পৌর প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মঠবাড়িয়া পৌরসভারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
তার ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও রাজধানী ঢাকাতেও মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, রত্তন হাওলাদার স্ব-পরিবারে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় ৫টি মাদক মামলা রয়েছে। শোভা রানীর ওপর হামলার আগে মঠবাড়িয়া থানার উপ পরিদর্শক শাহানাজ পারভীন এক হাজার ৩০০ পিস ইয়াবাসহ পুরো পরিবারকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে পিরোজপুর ডিবি পুলিশের এসআই দোলোয়ার হোসেন জসিম ৪ দফা তাদেরকে ইয়াবা, গাঁজা, চোরাই মাল ও নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার করেন।
এস আই দোলোয়ার জানান, বিভিন্ন সময় চোরাই মাল ও ১ কেজি গাঁজাসহ রত্তনের ছেলে কালামকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় দফায় তাদের ১০ কেজি গাঁজা, ২০০ পিস ইয়াবা, তৃতীয় দফায় ৫ পিস ইয়াবা ও নগদ ৩২ হাজার টাকা এবং শেষবার ৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
এসব ঘটনায় মাদক কারবারি রত্তন হাওলাদার ও তার ছেলে ইসমাইল হাওলাদার প্রতিবেশী শোভা রানীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলো। ইসমাইল জামিনে মুক্ত হয়ে গত ২ জুলাই রাতে শোভা রানীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা চালায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা মাদক কারবারি ইসমাইল ও তার পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ভুক্তভোগীরা জানান, এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারে জড়িত পরিবারটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে। মাদক পরিবার হিসেবে কয়েক বছর আগে এলাকাবাসী তাদেরকে এলাকাচ্যুত করে। অজ্ঞাত প্রভাবে আবারো তারা ওই জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে মাদক কারবার চালিয়ে আসছে।
শোভা রানী মজুমদার বলেন, পুলিশ বার বার মাদক পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে। আমার বাসা ওই মাদক পরিবারটির বাসা সংলগ্ন হওয়ায় আমি পুলিশকে সহযোগিতা করেছি- এই সন্দেহে তারা আমাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। আমাকে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। তিনি ড়্গোভের বলেন, আজ দুমাস হলেও পুলিশ কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে পরে আমাকে খুন করে ফেলবে।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত আসামিরা ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply