রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার মেঘনায় খুটাজাল পেতে দখল করে নিয়েছে গোটা মদনপুর এলাকার মেঘনা নদী। দখলদারদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার সাধারণ জেলে। নদীতে জাল ফেলতে যেতে পারছেন না সাধারণ জেলেরা। গেলেই গুলির মুখে পড়তে হচ্ছে। হামলা ও মারধরের শিকার হচ্ছে। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের জাল ও নৌকা। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না তারা।
গতকাল সোমবার স্থানীয় জেলেরা একত্রিত হয়ে খুটাজালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালীদের সন্ত্রাসী বাহিনী জেলেদের ওপর হামলা চালায়। আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী নদীতে অস্ত্রের মহড়া দেয়। এ সময় তারা জেলেদের ধাওয় করে।
গুলির শব্দে মদনপুর চরের আশ্রায়ন প্রকল্পের শিশু ও নারীরা গিয়ে ধান ক্ষেতে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করে। সন্ত্রাসীদেরকে বাধা দিতে গিয়ে মদনপুর ইউনিয়নের ৩ চৌকিদার গুরুতর আহত হন। আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে ওই চরের কয়েক শ নারী-পুরুষ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার ওই চরের কয়েক শ নারীপুরুষ এভাবেই তাদের আতংকের কথা জানান। শহিদ মাঝি জানান, সোমবার ৫টি স্পিডবোট ও দুটি ট্রলারে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী এসে চরে হামলা চালায়। গুলি করে। ত্রাস সৃষ্টি করে।
মদনপুর চরের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রেহানা বেগম, ফাইমা বেগম, লুৎফা বেগম, হালিমা বেগম, আকলিম বেগম, রোকেয়া বেগম, সাবরিনা বেগম, গোলেনুর বেগম, চৌকিদার মহিউদ্দিন, জমিরআলী, মো. আলমগীর জানান, ওই ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষের এক মাত্র উপার্জনের অবলন্বন হচ্ছে নদীতে মাছ ধরা ও কৃষি কাজ করা। তিন দফা জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ে ক্ষেত্রের ফসল বিনষ্ট হয়েছে। আবার ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এখন মাছ ধরার সময়। প্রভাবশালী একটি চক্রের কারণে তারা নদীতে জাল ফেলতে পারছেন না।
সোমবার চকেট জামাল, কামাল, নিরব বাহিনী নদীতে খুটা গেড়ে নিষিদ্ধ খুঁচচি জাল, বেড় জাল বসিয়ে গোটা মেঘনা নদী এককভাবে দখল করে নেয়।
নিষিদ্ধ জাল দিয়ে এরা কোটি কোটি মাছের রেনু পোনা নষ্ট করছে। সাধারণ জেলেদের তাড়া করছে। সাধারণ জেলেরা এর প্রতিবাদ করলে গুলিবর্ষণ করা করে। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নান্নু ডাক্তারের নির্দেশে ওই এলাকায় ছুটে যান ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) মহিউদ্দিন, আব্দুল মান্নান, মো. হেলাল উদ্দিন। সন্ত্রাসীরা তিন গ্রাম পুলিশকে বেধে পিটিয়ে আহত করে।
আশ্রয়ণ ও চরবাসীদের দাবি- নদী কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। জেলেরা নদীতে মাছ ধরবে। সবার সমান অধিকার। অথচ নিরব, জামাল বাহিনী সাধারন জেলেদের বৈধ চালও ফেলতে দিচ্ছে না। এই সব ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরে ওই মদনপুর চরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে মো. জামাল উদ্দিন চকেট জানান, এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তার মাছের ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু জেলেদের ওপর তিনি বা তার পরিবারের কেউ হামলা করেননি।
তিনি আরো জানান, এসব অভিযোগ হচ্ছে ভোটের রাজনীতি। তিনি মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এসব ভিত্তিহীন বানোয়াট অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে মদনপুর চরে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে অস্ত্রের মহড়ার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। অধিকতর তদন্তের জন্য আবারও পুলিশ পাঠানো হবে ওই এলাকায়।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। খুটাজালসহ সকল অবৈধ জাল অপসারণে শিগগিরই তিনি অভিযান শুরু করবেন।
Leave a Reply