সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ স্থানীয় এক অবৈধ সুদ কারবারির কাছ থেকে পাঁচ বছর আগে সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার নলী বাজারের একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন পলাশ (৩৭)। পাঁচ বছরে তিনি সাত লাখ টাকার বিপরীতে শুধুমাত্র সুদই দিয়েছেন ১১ লাখ টাকা। তারপরেও যখন সুদের টাকার জন্যে অকথ্য গালিগালাজ এবং হুমকিসহ বারবার চাপ দিচ্ছিলেন ওই সুদ কারবারি, তখন অনন্যোপায় হয়ে লজ্জা, অপমান এবং ঘৃণায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন পলাশ। আত্মহত্যা করেও রেহাই মেলেনি তার। মৃত্যুর পরেও পলাশের মুঠোফোনে রিং দিতে থাকেন ওই সুদ কারবারি। শনিবার প্রত্যুষে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট লিখে গিয়েছিলেন পলাশ। সেখানে তিনি অবৈধ সুদ কারবারির কবলে পড়ে অতিরিক্ত সুদের চাপ এবং তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অকথ্য গালিগালাজসহ অব্যাহত হুমকির কারণে অনন্যোপায় হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে উল্লেখ করে গেছেন তিনি। বেলাল হোসেন পলাশ নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া এলাকার মৃত শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। তিনি নলী বাজারের একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী।
পলাশের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বরগুনা শহরের একজন পল্লী চিকিৎসক ও অবৈধ সুদ কারবারি জহিরুল ইসলাম সৌরভের কাছ থেকে প্রথমে তিন লাখ টাকা ঋণ নেন। এরপর পর্যায়ক্রমে এভাবে তিনি ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদে সর্বমোট সাড়ে সাত লাখ টাকা ঋণ নেন। গত পাঁচ বছরে তিনি ওই ঋণের বিপরীতে শুধুমাত্র সুদ বাবদ পরিশোধ করেন ১১ লাখ টাকা।
পলাশের স্ত্রী রোকসানা বেগম জানান, ২৬ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দেন সুদ কারবারি সৌরভ। গত বুধবার সৌরভকে ওই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্ত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বৃহষ্পতিবার পলাশকে অকথ্য গালাগাল করেণ ওই সুদ কারবারি। একপর্যায়ে অনুনয়-বিনয় করে শনিবার পর্যন্ত সময় নেন পলাশ। শনিবার ফজরের নামাজের পর সৌরভ টাকা চেয়ে পলাশকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করে। পরে অপমান এবং ঘৃণায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন পলাশ। সাড়ে ৭টার দিকে আবারো পলাশের মুঠোফোনে পলাশকে চান সৌরভ। পলাশের স্ত্রী রোখসানা ফোন রিসিভ করে তখন সৌরভকে জানান- পলাশের আত্মহত্যার কথা।
রোখসানা বেগম আরো বলেন, অবৈধ সুদ কারবারির কবলে পড়ে অপমান এবং ঘৃণায় তার স্বামী ছোট ছোট দুটি সন্তান রেখে চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। অবৈধ সুদ কারবারিদের কবলে পড়ে আর কোনো পরিবারে যেন এমন ঘটনা না ঘটে তাই এ ঘটনায় অবৈধ সুদ কারবারি সৌরভের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। এদিকে এ ঘটনার পর ফোন বন্ধ করে গাঢাকা দিয়েছে অবৈধ সুদ কারবারি ও পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভ। বরগুনার ফার্মেসিপট্টি্ এলাকায় গিয়ে তার চেম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পলাশের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ সময় মৃত পলাশের জামার পকেট থেকে ওই চিরকুটটি উদ্ধার করে পুলিশ। বরগুনা সদর থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শহীদুল ইসলাম মিলন জানান, এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply