মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার তালতলী শহরে যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান কামাল মোল্লা এক নারীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার রোজিনা আক্তারকে (৩৫) পেটানোর সময় যুবলীগ নেতার ভয়ে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যায়নি। এ ঘটনায় তালতলী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান কামাল মোল্লার এক সহযোগী সাগরকে গ্রেপ্তার করেছে তালতলী থানা পুলিশ। বুধবার সকালে ওই নারীর জবানবন্দি নেয়ার জন্য আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের রোজিনা আক্তার নিজস্ব কাজে তালতলী উপজেলা শহরে যান। শহরের বাঁধঘাট চৌরাস্তায় মনিকা সাতক্ষীরা দধি ঘরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পরিচিত জলিল নামের এক ব্যক্তির সাথে দধি খাচ্ছিলেন রোজিনা। এ সময় তালতলী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল মোল্লার সহযোগী শ্রী সাগর ও সাগর মিয়া গিয়ে মোবাইলে তাদের ছবি ধারণ করে।
এ সময় রোজিনা তাদের ছবি তুলতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে ক্ষেপে যান শ্রী সাগর ও সাগর মিয়া। এক পর্যায় তারা ওই নারীকে দধি ঘরে বসে শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও মারধর শুরু করে। এর কিছুক্ষণ পরই যুবলীগ নেতা কামাল মোল্লা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাগরদের সাথে যোগ হয়ে রোজিনাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে যায় এবং প্রকাশ্যে বেধরক মারধর করে।
রোজিনার ডাক চিৎকারে অনেক লোকজন জড়ো হলেও যুবলীগ নেতা কামাল মোল্লার ভয়ে কেউ এগিয়ে যায়নি। পরে স্থানীয়রা রোজিনাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আইনহত সহযোহিতার জন্য থানায় যাওয়ার পথে কামাল মোল্লা বাঁধা দেয়। এ ঘটনায় তালতলী শহরে এক চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ওই রাতেই আহত রোজিনা আক্তার বাদী হয়ে তালতলী থানায় সাগরকে প্রধান আসামি করে যুবলীগ নেতা কামাল মোল্লাসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ আসামি শ্রী সাগরকে গ্রেপ্তার করেছে। রোজিনার নিরাপত্তা বিবেচনায় রাতে তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়। বুধবার পুলিশ ওই নারীকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
আহত রোজিনা বলেন, আমি আর আমার এক পরিচিত জলিল মিয়া মনিরা সাতক্ষীরা দধি ঘরে বসে দধি খাচ্ছিলাম। এমন মুহূর্তে দু’টি ছেলে এসে আমাদের ছবি তুলছিল। আমি এর প্রতিবাদ করায় আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও মারধর শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে কামাল মোল্লা এসে আমাকে ওই ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নামিয়ে বেধরক মারধর করে।
তিনি বলেন, আমি শত অনুনয় করেও কামাল মোল্লার মন গলাতে পারিনি। আমি কি অপরাধ করেছি জানি না। আমার ওপরে এমন অহেতুক নির্চাতনের বিচারের দাবি করছি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট।
অভিযুক্ত তালতলী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল মোল্লা বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাকে অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে।
তবে তিনি দুই সাগরের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, তারা ওই নারীক মারধর করেনি।
তালতলী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা আসামি শ্রী সাগরকে গ্রেপ্তার করেছি। অপর আসামিকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যহত আছে।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। নির্যাতিত নারীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply