শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলায় নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফের (৩৩) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলের মৃত্যুর খবরে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা আর বার বার অজ্ঞান হচ্ছেন মা। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র।
নিহত হাদিসুর বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আবদুর রাজ্জাক ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে।
স্বজনরা জানান, চার ভাইবােনের মধ্যে হাদিসুর দ্বিতীয়। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে ৪৭ ব্যাচে লেখাপড়া শেষ করে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দিয়েছিল হাদিসুর। ওই জাহাজটিতে সাত বছর ধরে চাকরি করেন তিনি। বুধবার রাত ১০টার দিকে জাহাজ থেকে হাদিসুরের এক বন্ধু ফোন করে জানান, তাদের জাহাজে রকেট হামলা হয়েছে। জাহাজে বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিল। এর মধ্যে হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় হামলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন। হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন স্বজনরা।
নিহত হাদিসুরের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, ভাইয়ার মৃত্যুর খবর শুনেই বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। মা বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। মৃত্যুর আগেও ভাইয়ার সঙ্গে আমাদের কথা হয়। ভাইয়া বলেছিলেন, আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসে যেভাবেই হোক ঘরের নির্মাণ কাজ ধরবেন। কিন্তু একি হলো, ভাইয়াকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেল।
বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, হাদিসুর রহমান আমার আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। এবার বাড়ি ফিরলেই হাদিসুরকে বিয়ে করানো হবে বলে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন আগে হাদিসুর তার মাকে ফোন করে জানিয়েছিল যুদ্ধে আটকা পড়ার কথা। তখন থেকেই আমরা শঙ্কায় ছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। এখন তো আরও দুশ্চিন্তায় আছি, মরদেহ দেশে আনব কিভাবে। হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রসঙ্গত, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। যুদ্ধাবস্থা এড়াতে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করেই দ্রুত ফেরত আসার নির্দেশনা দেয় শিপিং কর্পোরেশন।
অপরদিকে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরোতে পারছিল না জাহাজটি। সবশেষ বাংলাদেশ সময় বুধবার (২ মার্চ) রাত ৯টা ২৫ মিনিটে জাহাজটিতে রকেট হামলা হয়। এতে হাদিসুর রহমান আরিফ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। জাহাজের বাকি ২৮ জন নিরাপদে রয়েছেন বলে জানান বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইন। বর্তমানে জাহাজটি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা আছে।
Leave a Reply