সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার আমতলী পৌর এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে পৌরশহর ও এর আশেপাশের সড়কগুলোতে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক শিশুরা চালাচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহন। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
আমতলী পৌর শহরের বাঁধঘাট চৌরাস্তা, একে স্কুল চৌরাস্তা, বটতলা, বৌবাজার, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, তিন রাস্তা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন প্রাপ্ত বয়ষ্ক ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকের মধ্যে চারজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালক রয়েছে। এসব চালক উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন সকালে পৌর শহরে এসে ৩শ টাকায় রিকশা ভাড়া নেয়। এরপর সারাদিন পৌর শহর ও আশেপাশের সড়কগুলোতে যাত্রী টেনে সন্ধ্যার পরে আবার বাড়িতে ফিরে যায়। অনেক সময় এ সব শিশুরা রিকশা চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। একে স্কুল চৌরাস্তায় কথা হয় চাওড়া ইউনিয়নের তালুকদার বাজার এলাকার শিশু রিকশা চালক রাসেলের (১২) সঙ্গে, এ বয়সে রিকশা চালাও কেন জানতে চাইলে সে বলে, ‘কী করমু, গরিব ঘরে জন্ম, তিন ক্লাশ পর্যন্ত লেহাপড়া করছি। অভাবের সংসার, বাবা দিন মজুর, মোগো ছয়জনের পরিবার, হ্যার ওপরে দুই বোন বড়, হের লাইগ্যা বাধ্য অইয়া রিকশা চালাই। হারাদিন রিকশা চালইয়া ৮-৯শ টাহা আয় করি।’
ফেরিঘাটে কথা হয় অপর শিশু রিকশা চালক শামীমের (১১) সঙ্গে। সে জানায়, তার বাড়ি উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের যুগিয়া গ্রামে। চারজনের পরিবারে বাবা নেই। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ছে সে। অভাবে পড়ে বাধ্য হয়ে সে রিকশা চালায়। এতে যা আয় হয়, সেটা দিয়ে তাদের সংসার চলে।
অন্যদিকে বউ বাজারে আমতলী সদর ইউনিয়নের ফকিরবাড়ী এলাকার শিশু রিকশা চালক ফরিদের (১৩) সঙ্গে কথা হলে সে বলে, ‘মোগো মায় মোগো দুই ভাইরে ছাইড়্যা অন্য এক বেডারে বিয়া কইর্যা ঢাকা থাহে। বাবাও অন্য হানে বিয়া হইর্যা হ্যারে লইয়া থাহে। মোরা দু’ভাই এহন দূর-সম্পর্কের এক খালার বাড়িতে থাহি। ছোট ভাইডা (রশিদ) বাড়ির ধারে প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেহাপড়া করে। প্রত্যেকদিন রিকশা চালায়ে যা পাই তা দিয়ে মোরা দুই ভাই খাইয়া দাইয়া কোনো রকম জীবন চালাইতে আছি।পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার ১৫টি ব্যাটারি চালিত রিকশা আছে। আমি প্রতিদিন প্রতিটি রিকশা একেক জনকে ৩শ টাকা করে ভাড়া দিই। এর মধ্যে আটজন শিশু চালক আছে যারা প্রতিদিন আমার কাছ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে পৌর শহরে চালায়।
শিশুদের রিকশা ভাড়া দেন কেন, জানতে চাইতে তিনি বলেন, বড়রা দুই-এক দিনের ভাড়া বাকি রাখলেও শিশু চালকরা ভাড়া ঠিকঠাক মতো পরিশোধ করে। সেজন্য শিশু চালকদের ভাড়া দিই।
এ ব্যাপারে আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান বলেন, পৌরশহরে শিশুরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালায় সেটা আমার জানা নেই। এত অল্প বয়সে শিশুদের রিকশা চালাতে গিয়ে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই কোনো শিশুকে পৌর শহরের মধ্যে রিকশা চালাতে দেওয়া হবে না।
Leave a Reply