আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সংক্রমণ Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সংক্রমণ

আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সংক্রমণ

আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সংক্রমণ




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দেশে আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সংক্রমণ। প্রায় দুই মাস ধরে সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু কয়েক দিন ধরে করোনার সব সূচক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রাণঘাতী এই মহামারির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উদ্যোক্তারা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে ব্যবসা সুরক্ষায় আগাম পদক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ নতুন প্রণোদনা প্যাকেজেরও দাবি উঠেছে।

 

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধকলই এখনো কাটেনি। শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে কলকারখানা চালু রাখলেও ক্রেতাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, অতীতেও ক্ষেত্রবিশেষে ঋণ পরিশোধে দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়েছিল। অনেক উদ্যোক্তাই এই সুবিধা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ছোট আকারের কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করেছেন। ফলে ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বাড়িয়ে দিলে উদ্যোক্তারা যেমন বাঁচবেন, তেমনি ব্যাংকও আটকা পড়বে না। করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

 

 

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪ শতাংশের মতো। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট দুই হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৪৫ শতাংশ এবং বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৬১ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল দুই হাজার ৬২৪ কোটি ডলার।

 

 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের বাজারে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না।

 

 

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি (বিজিএমইএ) ড. রুবানা হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার মুহূর্তে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এবং অতি সংক্রমণশীল নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব সারা বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এরই মধ্যে লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা জারি করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। ইউরোপে আবারও লকডাউন আরোপ করা হলে মৌসুমের বড় বিক্রি হারাবে ক্রেতারা এবং এতে নতুন ক্রয়াদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেটি হলে অনেক কারখানায়ই প্রয়োজনীয় ক্রয়াদেশ থাকবে না। আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। আমাদের সদস্য কারখানাগুলোকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সার্কুলারের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছি।’

 

 

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং নির্দেশনার ফলে প্রাপ্ত নীতি সহায়তা পোশাকশিল্প এবং এর সঙ্গে জড়িত লাখো শ্রমিককে রক্ষায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের আবারও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন করেছে। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সামান্য ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি পুনরায় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই বছরের শেষ কিংবা আগামী বছরের শুরু ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং পোশাক রপ্তানি কোনোটাই আলোর মুখ দেখবে না। তার পরও আমরা আশাবাদী হচ্ছি এবং আপ্রাণ চেষ্টা করছি ছন্দ ফিরে পেতে। এ ব্যাপারে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো জরুরি। করোনার ফলে সংকটাপন্ন কারখানাগুলোর সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুনরায় ব্যবসায় ফিরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করতে হবে। দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বায়ারদের থেকে আইনি সুরক্ষা প্রয়োজন।’

 

 

জানতে চাইলে দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী গ্রুপ আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা গভীর সংকটের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি খুবই অস্থির। স্টিলের স্ক্র্যাপের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার, সিমেন্টের কাঁচামালের দাম ৪২ থেকে ৫৯ ডলার, পিভিসি রেজিনের দাম ৭৫০ থেকে এক হাজার ৭৫০ ডলারে উঠেছে। আমাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকুচিত হয়েছে। চীন সরকার ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিশ্বের কাঁচামালের বেশির ভাগই এখন চীন নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কাঁচামাল আনার জন্য পর্যাপ্ত জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্যাশ ফ্লোর ওপর ব্যাপক চাপ পড়ছে।’

 

 

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ব্যবসা এখন প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। করোনায় প্রথম দফায় যে লোকসান আমরা করেছি, তার ধকল কাটাতে না কাটাতে আবার সংকট দেখা দিলে ছোট-বড় সবার জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা এখন হার্ট অ্যাটাক করা রোগীর মতো। মনে হচ্ছে, আমরা নিঃশ্বাস নিচ্ছি, কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে ড্যামেজ হয়ে গেছি। খুব দ্রুত কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের উচ্চমাত্রার সুরক্ষা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ থেকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ব্যবসায়ীদের মুক্তি দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য আরো প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।’

 

 

ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি রপ্তানি খাত। আমরা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার কেন্দ্রিক পোশাকের ব্যবসা হারিয়েছি। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় আছে ব্যবসায়ীসমাজ।’

 

 

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা আমাদের জন্য বড় আশীর্বাদ। আমরা আশা করেছিলাম, হয়তো দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু সেই ঘুরে দাঁড়ানো এখনো যায়নি। এখনো আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। তাই প্রণোদনার ঋণের অর্থ পরিশোধের সময় বাড়ানো দরকার। যেসব খাত সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়বে সেগুলোকে আবার সহায়তা দিতে হবে।’

 

 

অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন, বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে শতভাগ পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রয়োজন ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি, যা এখনো ফিরে আসেনি। তাই অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকঋণ শোধ ও অন্যান্য নীতি সহায়তায় আরো ছাড় দেওয়া দরকার। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা আরো সংকটে পড়বেন। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাবে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ যেসব দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি, সেখানে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউও শুরু হয়েছে। এতে রপ্তানি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

 

 

প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে তিনি বলেন, সহায়তা হয়তো আরো লাগবে। তবে কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। বিতরণও যথাযথভাবে হয়েছে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি যথার্থ বিতরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

 

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসরকারি খাত আরেকটি ধাক্কা খেতে পারে। সরকার যেসব সুবিধা দিয়েছিল, সেগুলোও অব্যাহত রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, সরকারি খাতে যদি প্রাণচাঞ্চল্য না থাকে তাহলে বেসরকারি খাতও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। সে জন্য মহামারিকালে অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফেরত আনতে সরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়াতে হবে। এতে কর্মসংস্থান হবে, মানুষের আয় বাড়বে। সেটার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যক্তি খাতেও।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD