শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টর ॥দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অসহায় দুঃস্থ থেকে শুরুর করে বিত্তশালীদের চিকিৎসা সেবার এই প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পুরনো। নানা অনিয়মের মাঝে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের বরাদ্দকৃত ঔষধ না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রির বিষয়টি আড়ালে পড়ে যায়। একাধিকবার ঔষুধ চুরির ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়লেও সব সময় সেগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। ঔষধ চুরি কিংবা সাব স্টোর থেকে ঔষধ গায়েব হয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কাহিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মেডিকেল প্রশাসনের নজরে আসলেও এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন কার্যকর ব্যবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের নতুন পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন গত ২৫ জুলাই, ১৮ইং তারিখে শেবাচিমহা-বরি/২০১৮/৩৪১১ স্বারকে ভেরিভেকেশন ও কন্ডোমেশন বোর্ডের আওতায় সকল ওয়ার্ড, ওটি ও স্টোর পর্যবেক্ষন করার জন্য আদেশ জারি করেন। উক্ত আদেশ বাস্তবায়ণ করতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে রয়েছেন শেবাচিমহা সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এইচ. এম. সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার), ডা. মো. ইউনুস আলী, শিশু বর্হিবিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মাহমুদ হাসান, উচ্চমান সহকারী সৈয়দ মো. জাকির হোসেন, অফিস সহকারী মো. ইব্রাহিম খলিল ভূঁইয়া। কমিটিকে গত ১আগষ্ট, ১৮ইং থেকে ৩১ আগষ্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও গত ২৬ জুলাই ২০১৮ইং ওই কমিটিকে সহায়তা করার জন্য মেডিকেলের সকল বিভাগীয় প্রধানকে অনুরোধ করে একটি আদেশ জারী করেন পরিচালক। ওই কমিটি গত ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মেডিকেলের ওটিগুলো পর্যবেক্ষন করেন। সেখানে তাদের নজরে আসে বেশ কিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার। এছাড়াও গত ৬ আগস্ট থেকে ৮আগস্ট তারিখ পর্যন্ত তিন দিন মেডিসিন সাব-স্টোর পর্যবেক্ষন করে কমিটি।
সাব-স্টোরে ব্যালেন্স ও স্টক লেজারে অসামঞ্জ্যতা, অনিয়ম, হিসাবে গরমিল, অতিরিক্ত ঔষধ সহ নানা অনিয়ম দেখতে পান কমিটির সদস্যরা। এসময় সাব-স্টোরের দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট নির্মল কুমারের কাছে অতিরিক্ত ঔষধের মজুদ ব্যাপারে যানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পরে সাবস্টোরে পাওয়া অতিরিক্ত ঔষধ জব্দ করে নিয়ে যায় কমিটির সদস্যরা।
সূত্র জানায়, মেডিসিন সাব স্টোরটি সার্বক্ষনিক মনিটরিং করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। ফার্মাসিস্ট নির্মল কুমার স্টোরের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কৌশলে সিসি ক্যামেরা অচল করে রাখেন। সিসি ক্যামেরা অচল বিষয়ে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের নিকট কোন লিখিত অভিযোগ দাখিলও করা হয়নি। নিজের সুবিধার্থে পূর্বে অভিযুক্ত দুই ফার্মাসিস্ট শিশির ও লিটনকে সু-কৌশলে সরিয়ে নির্মল কুমার নিজের মেয়ে নিশি হালদারকে স্টোরের কাজে ব্যবহার করতেন। এ বিষয়টি একাধিকবার বর্তমান পরিচালকের নজরে আসলে নির্মল কুমারের মেয়েকে সাব স্টোর থেকে বের করে দেন পরিচালক। মেডিকেল সাব-স্টোরের দায়িত্বে থাকা নির্মল বিরুদ্ধে ঔষধ চুরিরর একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্মলের স্ত্রী ও মেয়ে সাব-স্টোরে দায়িত্ব পালনের ছলে সরকারী অতিগুরুত্বপূর্ন থ্রি-পার্সেন্ট স্যালাইন নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে করে বাহিরের ফার্মেসিতে পাঁচার করতেন। যা অতিরিক্ত মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে মেডিকেলের সামনের ফার্মেসিতে। বর্তমানে তার স্ত্রী এবং মেয়ে সাব স্টোরে নিষিদ্ধ হওয়ায় নির্মলের সিন্ডিকেট সদস্যরা বিভিন্ন পন্থায় পাঁচার করছেন ফার্মেসিতে। সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা. মু. কামরুল ইসলাম সেলিমের নির্দেশে স্টোর, সাব-স্টোর, ডিস্পেন্সারীকে কম্পিউটারের আওতায় এনে ডিজিটাল হিসাব অন্তুর্ভূক্তকরনের নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্মল কুমার তার নিজের মতো করে বাহির থেকে ইন্টার্ন করতে আসা বহিরাগতদের দিয়ে কম্পিউটারের হিসাবের ইনপুট ও আউট পুট কাজ করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে নির্মল কুমারের সাথে কথা বলল্লে তিনি জানায় এ বিয়য়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যারা তদন্ত করতেছে তারা বলতে পারবে। আর আমি তখন উপস্থিত ছিলাম না। আমার বাসায় কিছু কাগজপত্র ছিল সেটার জন্য আমি তখন বাসায় ছিলাম। তার সহকারী হিসেবে মেয়েকে দিয়ে কাজ করানো ও ঔষধ পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা তো পুরোন কথা। আমার মেয়েকে দিয়ে কাজ করিয়েছি কিন্তু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বেতন দেয়নী তাই তাকে দিয়ে এখন আর কাজ করাই না। আর ঔষধ পাচারের প্রশ্নে বিষয়টি তিনি এরিয়ে যান।
এ বিষয়ে শের ই বাংলা মেডিকেলের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেনের আথে আলাপ করলে তিনি জানায় সাব-স্টোরে অতিরিক্ত ঔষধ পাওয়া গেছে সেটা সঠিক। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। তদন্ত শেষ ছাড়া আমার কিছু বলাও ঠিক হবে না আর অভিযান আগানোর ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম পেলে সেজন্য তো থেমে থাকা যাবে না। তদন্ত শেষে আপনাদের সাথে নিয়ে বিষয়টি প্রকাশ করা হবে। এসব বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন না করলে হাসপাতাল চালানো যাবে না বলে তিনি সাংবাদিকদের জানায়। তিনি আরো বলেন হাসপাতালটি দক্ষিনাঞ্চল মানুষের প্রান এটাকে আমাদের সকলের বাচিয়ে রাখতে হবে। তাই কিছু কিছু অনিয়োম রয়েছে সেগুলোকে দূর করার চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply