বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে বরিশাল নগরীর ক্ষুদ্র ও দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা। দিন আনা দিন খাওয়া সঞ্চয়হীন মানুষের আয় অনেক কমে গেছে। পেটের দায়ে নগরীর পথে পথে ভিক্ষা করছেন অসহায় ও নিঃস্বরা।
করোনাভাইরাসের আগে নগরীতে তুলনামূলক ভিক্ষুকের উপস্থিতি কম ছিল। বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলির মোড়ে, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণিবিতান, বেশি যানজটের সড়ক ও ট্রাফিক সিগন্যাল, মসজিদ, বাস, লঞ্চ টার্মিনাল, এটিএম বুথ বা বন্ধ হয়ে থাকা শপিংমলের সামনে এখন দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য অসহায় মানুষ, যারা কাউকে দেখলেই সাহায্য প্রার্থনা করছেন। সবখানেই দেখা মিলছে নতুন নতুন মুখ। যাদের বেশির ভাগই মৌসুমি ভিক্ষুক। মানিব্যাগ বের করলে, গণপরিবহন থেকে নামলে বা কেউ গাড়ির দরজা খুললেই সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে এরা।
নারী ভিক্ষুকদের সঙ্গে থাকছে শিশু সন্তানেরাও। মায়ের সঙ্গে তারাও করুণ চাউনি নিয়ে তাকিয়ে থাকছে কিছু পাওয়ার আশায়। বেশির ভাগ মধ্যবয়সি এসব নারী কখনোই ভিক্ষুক ছিলেন না। পথে পথে মানুষ বসে আছে ভিক্ষার আশায়। বিভিন্ন পেশার শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে এখন ভিক্ষা করছেন।
চৌমাথা বাজার সংলগ্ন রাস্তায় বাবার চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাইছিলেন খোদেজা। ভিক্ষা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার বাবা ভ্যানচালক। মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। বাবা বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় বহনের ক্ষমতা নেই তাদের। তাই বাবার চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন।
খোদেজার পাশাপাশি এমন সময় অসহায়ের মতো সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন তাছলিমা। তিনি জানালেন, বটতলা এলাকায় একটি দোকানে দর্জির কাজ করতেন। এখন কাজ বন্ধ। পেটের জ্বালায় ভিক্ষা করছেন তিনি।
নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে কমপক্ষে ১৫ জন নারী ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরা কেউ গৃহশ্রমিক, মার্কেটের দর্জির কাজ, সেলাই শ্রমিক, বিভিন্ন দোকানে পানি সরবরাহ, হোটেলে রাধুনীর কাজ, ফুটপাতে দোকানদারি করতেন। সামান্য যে বেতন পেতেন, সেই টাকা আর স্বামীর আয় মিলিয়ে তারা ভালোই চলতেন।
অনেকেই আবার বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ায় নিজের আয় দিয়েই কষ্ট করে সংসার চালাতেন। আগে কষ্ট হলেও অনিশ্চয়তা ছিল না। করোনাকালে নিম্ন বা স্বল্প আয়ের এই শ্রমজীবী সংগ্রামী নারীদের জীবনে নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ ঘোর অন্ধকার।
Leave a Reply