বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে গায়েব হওয়া ল্যাপটপ, ক্যামেরা, হার্ডডিস্কসহ বেশকিছু আলামত। ঘটনার পর মামলায় গাড়িতে থাকা এসব আলামতের কথা উল্লেখ করেনি পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সেখানে দাবি করা হয়, ডকুমেন্টারি তৈরির অংশ হিসেবে সিনহা দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের স্বজনদের সাক্ষাৎকার নেন। ঘটনার দিন বিকেলে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাক্ষাৎকারও নেন।
অনেকেই মন্তব্য করেছেন- সাক্ষাৎকারটি প্রদীপের জন্য ছিল বিপজ্জনক। তাদের মতে, এসব সরঞ্জাম অবিকৃতভাবে উদ্ধার হলে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করেছে র্যাব।
এদিকে মাদক, অস্ত্র এবং পুলিশের কাজে বাধা দানসংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে সিনহার সহযোগী সিফাত এবং শিপ্রার বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা করেছে সেগুলোর তদন্ত করতে চায় র্যাব। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিনহা এবং সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশ যে মামলা করেছে সেটিরও চূড়ান্ত প্রতিবেদন চেয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
একই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি করেছে পুলিশ, অপরটি সিনহার বোন। র্যাব চায় পুলিশের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হোক। সিনহার বোনের করা মামলাটির তদন্ত চলুক। এ মামলাটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী শিপ্রা ও সিফাত। র্যাব দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, তদন্তে সিফাত র্যাবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এ কারণে আদালতে তার জামিন এবং পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলার তদন্তভার র্যাবে আসার পর দেখা হবে সেখানে কোন ধরনের আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আদালতের মাধ্যমে পুলিশের কাছে সিনহার ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, ক্যামেরা এবং অন্যান্য আলামত চাইব। যদি সেগুলো সিজার লিস্টে না থাকে তাহলে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হবে। মৃত্যুর আগে সিনহা কার কার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সে বিষয় তদন্ত কর্মকর্তা খতিয়ে দেখছেন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না। এছাড়া সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা এখনো তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আশপাশের লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চলচিত্রের একজন খলনায়কের জড়িত থাকার অভিযোগও খতিয়ে দেখছেন তিনি।
৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ খান।
এ ঘটনায় বুধবার কক্সবাজারে টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে ওসি প্রদীপ ও মো. লিয়াকতসহ নয়জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেন নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে রুজু এবং র্যাব-১৫ কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
আদালত সূত্র জানায়, আদালতের আদেশ মতে মামলাটি বুধবার রাতেই টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন এসআই নন্দলাল রক্ষিত, এসআই টুটুল, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও কনস্টেবল মো. মোস্তফা। এ মামলায় নিহত সিনহা রাশেদ খানের সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আদালতে র্যাবের করা রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে তিনজনকে সাতদিন করে রিমান্ড দেয় আদালত। বাকি চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। পরে এ আদেশ পরিবর্তন করে আদালত। এ সময় বাকি দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এর আগে, প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তদন্তকেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সাতজনকে একসঙ্গে আদালতে হাজির করা হয়। বাকি দুই আসামি শেষ মুহূর্তে আত্মসমর্পণ করেননি। প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ হেফাজতে আদালতে নেয়া হয়।
Leave a Reply