শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
মুজিবের নামে অর্ঘ্য নিবেদন শুরু
মন খারাপের আগস্ট এসেছে। আজ বুধবার। মাসটির শুরু হলো। ক্রন্দনেরও শুরু। বাঙালীর এই একটি মাস বড় বেদনায় কাটে। বুকের গভীরে যে প্রাচীন ক্ষত, যে দগদগে ঘা, জেগে ওঠে নতুন করে। এখন সেই সময়। যারপরনাই ভারাক্রান্ত মন। পিতৃহত্যার গ্লানি আজও কুরে কুরে খাচ্ছে। হাতে এখনও যেন লেগে আছে রক্তদাগ। তাই কান্না। চোখের জলে প্রায়শ্চিত্য করার চেষ্টা। ফুলে গানে কথা কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। সারা মাস ধরেই চলবে অর্ঘ্য নিবেদন। নানা আয়োজনে মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। নিগূঢ় ভালবাসা প্রকাশ করবে।
আজ থেকে বহু বছর আগের সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বুকটাই যার বাংলাদেশ, সেই বুকে গুলি চালিয়েছিল একদল বিশ্বাসঘাতক। বর্বর পাকিস্তানীরা মুজিবকে বশে আনতে পারেনি। আদর্শ থেকে একচুলও টলাতে পারেনি। অথচ নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী অফিসার নির্দ্বিধায় গুলি ছুঁড়ে। মুজিবের মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিল তারা। সেটি হয়নি। যতদিন যাচ্ছে ততই উজ্জ্বল হচ্ছে নামটি। সূর্যের মতো আলো ছড়াচ্ছে। সারা বছর নানাভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বাঙালী। আগস্টে এসে আরও যেন গাঢ় হয় আবেগ। চলে মাসব্যাপী আয়োজন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা হাতে নিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। আজ বুধবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। থাকবে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এর বাইরে নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন মানপত্র আলোকচিত্র ইত্যাদি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমিও। আজ জাতীয় চিত্রশালায় চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে। থাকবে আলোকচিত্রও। আজ বুধবার থেকে নতুন করে আর্ট ক্যাম্পেরও আয়োজন করা হবে। এতে অংশ নিয়ে খ্যাতিমান শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুকে আঁকবেন। শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠানেও তুলে ধরা হবে মহান নেতাকে।
সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা সূর্যমুখীর উদ্যোগে আজ বুধবার জাদুঘরের সিনেপ্লেক্সে আয়োজন করা হবে শিমুল মুস্তাফার আবৃত্তি সন্ধ্যা। আলোচনা করা হবে ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন: গণমানুষের উন্নয়ন’ বিষয়ে।
শোকের মাসে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রেও চলছে বিশেষ প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বাংলা ও ইংরেজী বইয়ের বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে এখানে। ‘জাতির জনককে জানুন’ শীর্ষক মাসব্যাপী আয়োজনে প্রদর্শিত হচ্ছে তিন শতাধিক বাংলা ও ইংরেজী গ্রন্থ। থাকছে জীবনী, প্রবন্ধ, কবিতা, তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণসহ নানা রচনা। জাতির জনককে বিষয় করে লেখা বইগুলো দিয়ে সাজানো হয়েছে একটি আলাদা কোণ। বিদেশ থেকে প্রকাশিত কিছু দুর্লভ ইংরেজী বই রয়েছে। এর বাইরে এখানে থাকবে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক আলোচনা, কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠসহ নানা আয়োজন।
বই নিয়ে আরেকটি আয়োজন থাকছে শ্রাবণ প্রকাশনীর। ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ বইমেলা’ চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। মেলায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ বিভিন্ন লেখকদের রচিত ১০০টি নির্বাচিত বই প্রদর্শিত হবে। মেলার পিকআপ ভ্যান ঢাকা শহর ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে’ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এভাবে সারা মাস জুড়েই চলবে অর্ঘ্য নিবেদন। ঢাকায় নয় শুধু, সমগ্র বাংলাদেশে উচ্চারিত হবে মুজিব নাম। কবির ভাষায়Ñ তার ছায়া দীর্ঘ হ’তে-হ’তে/ মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে…। আর গীতিকবি গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের কথাটি তো আরও সত্য, যেখানে তিনি বলেনÑ একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/আকাশে বাতাসে ওঠে রণী…। আগস্ট মানে মুজিবের মৃত্যু নয়। আগস্ট মানে আকাশে বাতাসে মুজিবের ধ্বনি প্রতিধ্বনি।
Leave a Reply