রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার বেড়ি বাঁধের বাহিরে বসবাসরতদের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে দু’উপজেলার ৪ সহাস্রাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমতলী ও তালতলী উপজেলার অধিকাংশ জায়গায় হালকা ও মাঝারি ধরনের দমকা হাওয়া বইছে এবং থেমে থেমে কখনো ভারি আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এ দু’উপজেলার উপড় দিয়ে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদী প্রবাহিত। পায়রা (বুড়িশ্বর) নদী বিক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে। জোয়ারের পানিতে আমতলী-পুরাকাটা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কসহ গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ৪ ঘণ্টা জেলা সদরের সাথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
মঙ্গলবার সকালে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে দু’উপজেলার বেড়ি বাঁধের বাহির, নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত প্লাবিত হয়েছে। এতে আমতলী পৌরসভাসহ পায়রা নদী তীরবর্তী বেড়ি বাঁধের বাহিরে বসবাসরত চাওড়া, গুলিশাখালী, আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার এবং তালতলী উপজেলার সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া, বড়বগী ও ছোটবগী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের প্রায় ২২০০ পরিবারের বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে জয়ালভাঙ্গা, গাবতলী, বালিয়াতলী, বৈঠাকাটাসহ বেশ কয়েকটি বেড়ি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বেড়ি বাঁধগুলো ভেঙে জোয়ারের পানিতে দু’উপজেলার ২০ থেকে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হবে।
চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান খান বাদল বলেন, বৈঠাকাটা বেড়ি বাঁধটির অবস্থা এতটাই খারাপ যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ভেঙে দুই গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি উঠতে পারে।
সরেজমিনে আমতলী পৌরসভার ফেরিঘাট, শ্মশানঘাট, আমুয়ারচর ও চাওড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটা ঘুরে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধের বাইরে বসবাসরত পরিবারগুলোর বসতঘর জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সকল বাড়িঘরে পানিতে থই-থই করছে।
পৌরসভার আমুয়ার চরে বসবাসরত আবু হানিফ বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার বসত ঘরের নিচের অংশ তলিয়ে গেছে। ঘরের মালামাল উপড়ের অংশে রেখে বাধ্যহয়ে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে অন্যের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।
গুলিশাখালী নাইয়াপাড়ার জেলে রফিক বলেন, প্রতিটি বন্যার সময় আমাদের গ্রামটি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সমুদ্র উপকূলীয় তালতলীর সোনাকাটা ও নিশানবাড়ীয়ার ইউনিয়নরে বেড়ি বাঁধের বাহিরে বসবাসরতরা জানায়, জোয়ারে সাগর ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের অধিকাংশের বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন উচু বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছি।
নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দুলাল ফরাজি বলেন, আমার ইউনিয়নে অনুমান ৫০০টি পরিবার বেড়ি বাঁধের বাহিরে বসবাস করে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরে ও নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, এ উপজেলাটি বঙ্গোপসাগর সাগর ও পায়রা নদী দ্বারা বেষ্টিত। ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২২০০ পরিবার বেড়ি বাঁধের বাহিরে বসবাস করে। শুনেছি জোয়ারের পানিতে তাদের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। রাতের জোয়ারে যদি সকালের জোয়ারের চেয়ে পানি বেশী বৃদ্ধি পায় তাহলে ওই সকল পরিবারকে কাছাকাছি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ উপজেলায় বেড়ি বাঁধের বাহিরে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে অথবা সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply