জামিনে মুক্তি পেয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন চাল চোর চেয়ারম্যান পল্টু Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




জামিনে মুক্তি পেয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন চাল চোর চেয়ারম্যান পল্টু

জামিনে মুক্তি পেয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন চাল চোর চেয়ারম্যান পল্টু

চেয়ারম্যান পল্টু
চেয়ারম্যান পল্টু




বরগুনা প্রতিনিধি॥ স্থানীয় ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারীদের জামিনে মুক্তি পেয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু ও তার লোকজন। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

 

 

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের কাকচিড়া গ্রামের বাসিন্দা আলকাস খন্দকার (৪১) জানান, তার এবং তার মৃত পিতা আলতাফ খন্দকারের নামে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল তুলে চেয়ারম্যান পল্টু আত্মসাত করেছেন। এসব বিষয়ে তিনি অভিযোগ করায় তাকেসহ তার পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টুর লোকজন। অভিযোগ করেছেন ৯ নং ওয়ার্ডের হরিদ্রা গ্রামের সরোয়ার হাওলাদার (৩০)। তিনি বলেন, তার পিতা মো. শাহজাহান হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তারপরেও তার পিতার নামে প্রতিবছর ভিজিএফ এর চাল বরাদ্দ দিয়ে তা আত্মসাত করে আসছেন চেয়ারম্যান পল্টু। তার পিতাও ছিলেন একজন জেলে। তার পিতার মৃত্যুর পর থেকে তারা আপন দুই ভাই দুটি নৌকা নিয়ে বিষখালী নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ তাদের নাম জেলেদের তালিকায় নেই। উপরন্তু চেয়ারম্যান পল্টু জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর তার লোকজন তাদের দেখিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়ে আসছে।

 

 

বরগুনা জেলা মৎস্য লীগের আহ্বায়ক এইচ এম গোলাম কবীর বলেন, গত ১৩ মার্চ চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় কর্মহীন জেলেদের মাঝে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ভিজিএফ এর চাল বিতরণের যে মাস্টার রোল দাখিল করেন তার অধিকাংশই ভুয়া এবং বানোয়াট। তিনি আরও বলেন, ওই মাস্টার রোলে নিজেদের লোকজন দিয়ে ভুয়া টিপসই নিয়েছেন চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু। কাকচিড়া ইউনিয়নের ৫৫০ জন জেলের অনুকূলে দুই মাসের জন্য ৪৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ এই ৫৫০ জন জেলের মধ্যে ১৮০ জনই কোনো চাল পাননি। মাস্টার রোলের মাধ্যমে চাল বিতরণ দেখানো হয়েছে এমন তালিকায় ১৯ জন মৃত ব্যক্তিসহ ২২ জন রাজধানী ঢাকাসহ প্রবাসে অবস্থানরত ব্যক্তির নাম রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের নামে ৮০ কেজি করে চাল বিতরণ দেখিয়ে তা আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান পল্টু। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ করায় তাঁকে দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু।

 

 

স্থানীয় মো. শামছুল আলম পহলান বলেন, চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টুর একটি বাহিনী আছে যারা তার ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্নভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। তারাই এখন দরিদ্র বঞ্চিত জেলেদের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁকেও পরোক্ষভাবে হুমকি দিয়েছেন আলাউদ্দিন পল্টু ও তার লোকজন। বিগত ৯ বছর যাবত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কাকচিড়া বাজারসংলগ্ন ১ নম্বর খতিয়ানের ৩৫৫৮ নম্বর দাগের প্রায় এক একর সরকারি জলাশয় ভরাট করে ভিন্ন ভিন্ন প্লট বানিয়ে তা প্রায় একশ জন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যা বরগুনার জেলা প্রশাসক অবগত আছেন এবং উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও ভিজিডি, ভিজিএফ, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্কভাতা, ত্রাণের টিন, ত্রাণের ঘর ইত্যাদি পাইয়ে দেওয়ার নামে অসহায় জনগণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এডিবির বরাদ্দকৃত টাকায় ব্রিজ, কালভার্ট এবং গ্রামীণ সড়ক তৈরি ও মেরামতের ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। নিরীহ অনেক পরিবারের জমি অন্যায়ভাবে জবর দখল করেছেন। এসব বিষয়ে তিনি লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছেও।

 

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি জেল থেকে বেরিয়ে নিজ গৃহেই অবস্থান করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত বাইরেই বের হননি। কাউকে হুমকি দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তার দাখিলকৃত মাস্টার রোলে ১৯ জন মৃত ব্যক্তির নাম এবং ২২ জন প্রবাসীর নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক জেলের মৃত্যু হলেও তাদের ছেলেরা এখন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদেরকে চাল দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা অভিযোগের কোনো সত্যতা দুদক পায়নি বলেও তিনি দাবি করেন।

 

 

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবীর বলেন, চাল বিতরণের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টুর অনেক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। সঠিক তদন্তের মধ্য দিয়ে হয়তো তা বেরিয়েও আসবে। তবে চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু যদি কাউকে হুমকি দিয়ে থাকেন তবে তা অপরাধ।

 

 

উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অভিযোগে নৌবাহিনীর সহায়তায় চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই অভিযোগে গত ২১ এপ্রিল কেবলমাত্র প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্য্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ। গত ৮ জুন তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD