মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ৯ হাজার ৮শ’ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে গেছে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ বিষয়ক বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় তার সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার ছয়টি উপজেলায় ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় ৯ হাজার ৮শ’টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় কোনো বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পাওয়া যায়নি কোনো প্রাণহানি কিংবা নিখোঁজের খবরও।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ১৩ কিমি বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে পানি প্রবেশ করে ১৩১টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।
এতে ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের ২০ মেট্রিক টন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ২৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হেক্টর জমির শাক-সবজি, সাতটি আমবাগান ও পানের বরজসহ মরিচের বীজতলা।
বরগুনার কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রমিজুল রহমান বলেন, অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের কমই ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ কম ক্ষতিসাধনের পেছনে আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি একমাত্র কারণ।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় উৎপাদিত শতভাগ তরমুজ, বোরো ধান ঘরে তুলে নিয়েছিল কৃষকরা। এ ছাড়াও ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছিল জেলায় উৎপাদিত ৫০ ভাগ ভুট্টা এবং ৬০ ভাগ মুগ ডাল।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণত কৃষি ক্ষেত্রেই বেশি ক্ষতি সাধিত হয়। কিন্তু আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি থাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের বেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে মুগডাল এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে। এ ছাড়াও কিছু সূর্যমুখী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আমরা নিরূপণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে জেলার ২১৮টি মুরগি মারা গেছে। এ ছাড়াও জেলায় ১৫টি মুরগির খামার এবং ১৯টি গরুর খামারের শেড আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
বরগুনা জেলা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স-এর উপ-পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর আমি বরগুনা সদর উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ নিশানবাড়িয়া এবং চালিতাতলা এলাকাসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখেছি। এ ছাড়াও বেতাগী উপজেলার বদনিখালী এলাকাসহ ঘুরে দেখেছি বিভিন্ন এলাকা। এ সব এলাকায় কিছু গাছপালা ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছিল, তা আমরা অপসারণ করেছি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ সব এলাকায় তেমন কোনো ক্ষতিসাধন হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অল্পকিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের পরিদর্শনকৃত এলাকায়।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনায় সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই পানি নেমেও গেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি। এই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ পুনরায় নির্মাণ করতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলায় ৫০টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ১০টি খাবার পানির পুকুর ও ৫টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ লাখ টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, জেলায় ৪.৮৪ হেক্টর আয়তনের ১২১টি মাছের ঘের এবং ৪.০৫ হেক্টর আয়তনের ১০টি চিংড়ির ঘের জলোচ্ছ্বাসের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আনুমানিক ২০ মেট্রিক টন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে প্রায় ৪০ হাজার একর বনভূমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ইতিমধ্যেই মরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদী থেকে আমরা একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছি। আমাদের ধারণা হরিণটি জলোচ্ছ্বাসের কারণে মারা গেছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইক বিল্লাহ বলেন, জেলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আমরা বরগুনায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করব। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্য থেকে ১০০ পরিবারকে বাছাই করে শুক্রবার আমরা নগদ অর্থ ও টিন বিতরণ করব। এ ছাড়া তাদেরকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।
Leave a Reply