শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসার আলমারিতে লাখ লাখ টাকা থাকার কথা জানতেন রবিউল ইসলাম। আর সেই টাকা চুরি করতে ইউএনওর বাসায় যান তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালান।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রবিউল জুয়ায় আসক্ত। কয়েক মাস আগে জুয়ার নেশায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসা থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি করেন। এ টাকা ফেরত পাওয়ার পর তাকে হুমকি দিয়ে ইউএনও বলেন, ‘৬০ হাজার টাকা না দিলে তোমার নামে ডিসি কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়া হবে। তখন তোমার চাকরি থাকবে না।’ চাকরি রক্ষার জন্য ধার-দেনা করে রবিউল তাকে ৫০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু এর আগেই ডিসি অফিসে রবিউলের নামে অভিযোগ দেন ইউএনও ওয়াহিদা খানম। অভিযোগের তদন্ত শেষে ডিসি অফিস থেকে রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর রবিউলের বেতন বেসিকের অর্ধেক হয়ে যায়। পাওনাদারদের চাপ ও জুয়া খেলতে না পারায় মানসিক অস্বস্তিতে পড়ে যান রবিউল। এরপর ইউএনওর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওয়াহিদা খানমের কক্ষে ঢুকে তিনি ওয়্যারড্রবের ওপর থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেন।
এ সময় নিজের তিন বছর বয়সী সন্তান কান্নাকাটি শুরু করলে ইউএনও ওয়াহিদা খানম জেগে যান। রবিউলকে তিনি চিনে ফেলেন। তখন ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন রবিউল। এতে ইউএনও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর ওয়াহিদার বাবা ওমর আলী শেখের কাছে গিয়ে আলমারির চাবি চান রবিউল। চাবি দিতে রাজি না হওয়ায় ওমর আলীকেও হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে ইউএনওর শিশুসন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে ওমর আলী তাকে চাবির গোছা দেন। কিন্তু অনেকগুলো চাবি থাকায় রবিউল বুঝতে পারছিলেন না, আলমারির চাবি কোনটি। রবিউল অনেক চেষ্টা করেও আলমারি খুলতে না পেরে একপর্যায়ে চাবির রিং নিয়ে পালিয়ে যান। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেখানো তথ্যমতে চাবির গোছা উদ্ধার করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, ১৬১ ধারায় রবিউল পুলিশের কাছে সব খুলে বলেছেন। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে রবিউল প্রথম দফায় ইউএনওর বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয়বার চেষ্টায় সফল হন। ইউএনওর প্রতি ক্ষোভ এবং টাকা চুরি করতেই রবিউল এ হামলা চালিয়েছেন।
জবানবন্দি রেকর্ড করাতে তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জবানবন্দি রেকর্ড না করে ফের রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড শেষে রবিউল আদালতে জবানবন্দি দেবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ক্ষেত্রে জবানবন্দিতে চুরির উদ্দেশ্যের বিষয়টি উল্লেখ নাও থাকতে পারে।
রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহানুর রহমান, ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও মামলার বাদী ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্টরা ইউএনওর বাসার আলমারি খুলে ৪০ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার, স্বর্ণালংকার, ব্যাংকের চেক, জমির রসিদ ও দলিলপত্র পান। এগুলো উদ্ধার না দেখিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মামলার বাদী শেখ ফরিদ উদ্দিনের হাতে তুলে দেয়া হয়। আলমারিতে প্রাপ্ত ৪০ লাখ টাকার সবই এক হাজার টাকার নোট এবং ৪০টি বান্ডিল ছিল বলে জানা গেছে।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। আমরা দুইজনকে গ্রেফতার করেছি। পাঁচজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত রবিউলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই আমরা রবিউলের জবানবন্দি নেয়ার চেষ্টা করছি। তার জবানবন্দি পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
তিনি আরো বলেন, তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আলামতগুলো জব্দ করা হয়েছে। আলমারিতে কী ছিল না ছিল, তা আমাদের তদন্তের বিষয় না। তাই আলমারি থেকে পাওয়া কোনো জিনিস জব্দ করা হয়নি।
ওয়াহিদা খানম ঘোড়াঘাটের ইউএনও হলেও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। ডিসি কার্যালয়ে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার, ভূমি পদমর্যাদার) রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে একাধিকবার ঘোড়াঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও ইউএনও তা ঠেকিয়ে দেন বলে পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
Leave a Reply