সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ শরীফ ওরফে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন নয়ন বন্ড। সেই নয়ন বন্ড ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির প্রথম স্বামী; যা গোপনীয় ছিল। পরে স্ত্রী মিন্নির পরিকল্পনায় দ্বিতীয় স্বামী রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করে প্রথম স্বামী নয়নসহ তার বাহিনী। আর এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল তোলপাড়। পরে রিফাত হত্যার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণ। সেই কারণ থেকেই নয়ন বন্ড-মিন্নি কাহিনি শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডের সময় নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন মিন্নি। মূলত মাদকের নেশায় আসক্ত ছিলেন মিন্নি। আর নয়ন বন্ডও প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও ব্যবসা করতেন। পরিচয়ের পর থেকে মিন্নি ও নয়ন মাদকের নেশায় বুদ হতে থাকে। ফলে মাদকগ্রহণ থেকেই তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সেই ঘনিষ্ঠতা থেকেই নয়ন বন্ডের সঙ্গে গোপনে বিয়ে হয়েছিল আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, সেই বিয়ে গোপন করেই রিফাত শরীফের সঙ্গে সংসার পাতেন মিন্নি। গোপন বিয়ের সম্পর্ক থাকায় নয়ন বন্ড তার মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা একটি সিম মিন্নিকে দেন। মূলত রিফাত শরীফকে বিয়ে করার পরও সেই সিম দিয়েই নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন মিন্নি। এ সিম ছাড়াও আরো কয়েকটি সিম দিয়ে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন মিন্নি।
এদিকে, রিফাত হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নয়ন বন্ড ও মিন্নির নানা কুকীর্তি ফাঁস হতে থাকে। নয়ন-মিন্নির অন্তরঙ্গ মূহূর্তের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা করেন নেটিজেনরা।
বুধবার দুপুরে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে খালাসের রায় দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মৃত্যুদণ্ড- আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান। খালাস প্রাপ্তরা হলেন- রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর, কামরুল ইসলাম সায়মুন, মো. মুসা।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত করে। এরপর বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ছাড়েন তারা। গুরুতর আহত রিফাত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওইদিনই মারা যান।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। একইসঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ৮ জানুয়ারি একই মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনার শিশু আদালত।
Leave a Reply