মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ অপরাহ্ন
স্বপন কুমার ঢালী,বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার বেতাগীতে সড়কগুলোর দুই পাশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ওয়েল্ডিং কারখানা। পরিবেশ আইন না মেনে এসব কারখানার প্রভাবে চোখে আলোক রশ্মি প্রবেশ করে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
যত্রতত্র কারখানা গড়ে ওঠায় ঝালাইকালে তীর্যক অতিবেগুনি রশ্মির বিচ্ছুরণ ও উচ্চ শব্দ ছড়িয়ে পড়ায় বিপদের মধ্যে পড়ছে কোমলমতি শিশু, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী,পথচারী, বিশেষ করে গর্ভবর্তী নারী ও বয়স্করা। ফলে পরিবেশের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব, হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভাসহ ও সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট বাজারগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, বিবিচিনি বাসস্ট্যান্ড, দেশান্তরকাঠী, ফুলতলা, পুটিয়াখালী, ঝোপখালী, বেতাগী পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড ও বাজার সড়কের দুই পাশে, হাসপাতাল সড়ক, বেলি ব্রিজ বাজার, বাসণ্ডা পুলেরহাট, জলিসা বাজার, বটতলা, মোকামিয়া বাজার, মোকামিয়া মাদরাসা বাজার, কাজিরহাট, কাউনিয়া, বদনীখালী, কুমড়াখালী, মায়ার হাট, চান্দখালী বাজারসহ এসব ছোট বড় ২০টি হাট বাজারের দুই পাশে শতাধিক যত্রতত্র ওয়েল্ডিং কারখানা গড়ে উঠেছে।
এসব কারখানায় সাড়ে তিন শতাধিক শিশু ও যুবক কাজে যুক্ত। এসব কারখানায় খোলা স্থানে সড়কের পাশে জনসমক্ষে দিন-রাত ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলে। এছাড়া প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কের দুই পাশ দখল করে বাস এবং ট্রাকের জোড়াতালি ও ওয়েল্ডিং,গাড়ির পার্টস কাটা ছেঁড়া ও জোড়া লাগানোর কাজ ও ঝালাই দেওয়া, পুরোনো আনফিট গাড়ি জোড়াতালি দেওয়া, ঝালাই দেওয়া ও রং করা ইত্যাদি।
সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠা এসব দোকানের বাক্স, দরজা ও জানালার গ্রীল, লোহার রড ইত্যাদি ফুটপাত দখল করে রাখায় পথচারীদের মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। আবাসিক এলাকার প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশে খোলামেলাভাবে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে পুরো সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি পথচারী চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তন্বী আক্তারের বাবা মন্টু মিয়া বলেন, ‘প্রশাসন সচেতন হলে কারখানার মালিকরা এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। আমরা চাই প্রশাসনের মাধ্যমে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হোক। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, খোলা জায়গায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় পথচারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি পাশাপাশি স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীরা কৌতুহলবশত ওয়েল্ডিংয়ের কাজ দেখায় চোখের রেটিনা ও লেন্সে ক্ষতি ডেকে আনছে।
ওয়েল্ডিং কারখানার সঙ্গে যুক্ত যুবক ও শিশু শ্রমিকরা চোখে কালো গ্লাস ব্যবহার করছে না। ওয়েল্ডিংয়ের কাজের সময় তীব্র তীর্যক আলো বিচ্ছুরণের ফলে অতিবেগুনি রশ্মি যাতে বাইরে যেতে না পারে এজন্য ঘরের ভেতর আড়াল করে এবং কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখানকার শ্রমিকরা এসব নিয়ম মানছে না।
ওয়েল্ডিং কাজের ক্ষতিকারক প্রভাব সর্ম্পকে বেতাগী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তেন মং বলেন, ‘ওয়েল্ডিংয়ের অতিবেগুনি আলোক রশ্মি সরাসরি চোখের ভেতর প্রবেশ করলে রেটিনা ও লেন্স ক্ষতিগ্রস্ত করে, দৃষ্টির ব্যাপ্তি হ্রাস করে ধীরে ধীরে অন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়া চোখের পানি পড়া, যন্ত্রণা, জ্বালাপোড়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে।
সামান্য সংখ্যক এ কারখানাগুলোতে পরিবেশে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ব্যবসায়িক কাজের জন্য কোন লাইসেন্স থাকলেও অধিকাংশতেই নেই কোনো ছাড়পত্র ও লাইসেন্স। প্রশাসনের যথাযথ তদারকি না থাকার কারণে কারখানার সাথে জড়িতরা পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স নিতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের ওয়েল্ডিংব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, ‘খোলাভাবে কাজ করলে চোখের ড়্গতি এটা আমরা বুঝি কিন্তু কেউ কালো কাপড় ব্যবহার করছে না তাই আমিও খুলে রেখেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে ওয়েল্ডিং কারখানার এ সকল অভিযোগ পেয়েছি এবং অতিশিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যথাযথ আইনি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply